কক্সবাজারের চকরিয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মাতামুহুরী ছয় লেনের সেতুটি এখন অপরাধীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। সেতুতে লাইটিং ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যার পরই শুরু হয় অপরাধীদের তৎপরতা। এতে পথচারী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর ২৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২১ মিটার দীর্ঘ ও ৩০ মিটার প্রস্থ ছয় লেনের আধুনিক মানের দৃষ্টিনন্দন মাতামুহুরী সেতুটি নির্মাণ করে। তবে নির্মাণকালে এ দীর্ঘতম সেতুতে কোনো সড়কবাতি বা স্ট্রিট লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই সেতুটি যাত্রী চলাচলে অনিরাপদ হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা জানান, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার প্রায় চার বছর পার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়কবাতির ব্যবস্থা করেনি। ফলে অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে সেতুটিতে ছিনতাইকারী, অপহরণকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের তৎপরতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত চারবছরে সেতুতে একাধিক ছিনতাইসহ এর নির্জন পয়েন্টে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর ভোররাতে গিয়াস উদ্দিন নামের স্থানীয় এক টমটম গ্যারেজমালিককে অপহরণের পর কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে রাতের আঁধারে মাতামুহুরী সেতুর পাশে লাশ ফেলে দিয়েছিল খুনীরা। এতে সাধারণ পথচারীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা আরো জানান, এই সেতু দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে যান। তারা সেতুটি পার হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দেশের অন্যান্য সেতুর ওপরে ও অ্যাপ্রোচ অংশে লাইটিং ব্যবস্থা থাকলেও এই সেতুতে তা করা হয়নি। ফলে সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অপরাধীরা সেতুর নির্জন স্থানে অবস্থান নিয়ে সুযোগ বুঝে ঝাপিয়ে পড়ে এবং দু’ পাশে নির্মিত ফুটওয়ে দিয়ে চলাচলরত যানবাহন ও ইজিবাইক চালককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে অসংখ্য মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘মাতামুহুরী সেতুটি জাইকার অর্থায়নে ক্রসবর্ডার রোড ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ছয়লেনে উন্নীত করা হয়। ওই সময়ে সেতুতে সওজ অধিদফতর থেকে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল না। বর্তমানে সেতু এলাকাটি রাতের বেলায় অনিরাপদ হয়ে ওঠার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাই সেতুতে লাইটিং বসানোর জন্য নতুন করে একটি প্রকল্প নিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ হলেই আগামী দু’ মাসের মধ্যে সেতুর ওপর স্ট্রিট লাইট বসানোর কাজ শুরু হবে।’
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত থানার টহল পুলিশ মাতামুহুরী সেতু এলাকায় তৎপরতা জোরদার রেখেছে এবং কঠোর নজরদারির কারণে অপরাধপ্রবণতা অনেকাংশে কমেছে।’



