মানিকগঞ্জে কালি মন্দির ভাঙচুর : ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ

মানিকগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা শুরুর ঠিক আগের রাতেই কালি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার যড়ষন্ত্র ও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তথ্য সংগ্রহের জন্য পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ করছেন মন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জন বিশ্বাসসহ স্থানীয়রা।

মো: শাহানুর ইসলাম, মানিকগঞ্জ

Location :

Manikchhari

মানিকগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দূর্গা পূজা শুরুর ঠিক আগের রাতেই কালি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার যড়ষন্ত্র ও দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তথ্য সংগ্রহের জন্য পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে সন্দেহ করছেন মন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জন বিশ্বাসসহ স্থানীয়রা।

শুক্রবার গভীর রাতে জেলার শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার গভীর রাতে কে বা কারা মহাদেবপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর বিশ্বাসপাড়া কালি মন্দিরে দু’টি প্রতিমার মাথা ও হাত ভেঙ্গে রেখে যায়। পরে শনিবার সকালে স্থানীয়রা ভাঙচুরের বিষয়টি লক্ষ্য করে। পরে তারা মন্দির কমিটির সভাপতি রঞ্জন বিশ্বাসকে খবর দেন।

তিনি বলেন, সকালে স্থানীয়রা আমাকে খবর দিলে আমি দ্রুত মন্দিরে ছুটে যাই। দেখি দুটি মূর্তির মাথা ও হাত ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। আমাদের এই মন্দিরটি গ্রামের নির্জন স্থানে অবস্থিত হওয়ায় সেটি অরক্ষিত ছিল। সেই সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা এ কাজটি করেছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের গ্রামে হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলেমিশে বসবাস করি। এখানে কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক বিভেদ নেই। কিন্তু দুর্গাপূজার আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।

এই হিন্দু নেতা বলেন, আমাদের কোনো পূজা স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে, আমার তা কল্পনাও করতে পারি না। আমরা ঈদ ও পূজা একইভাবে উৎসবমুখরভাবে পালন করি। বিগত ১০০ বছরেও এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই। আমাদের ধারণা, বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে তুলে ধরতেই একটি কুচক্রী মহল এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এই ঘটনাকে দেখিযে অপপ্রচার করার জন্যই হয়তো তারা এটা করেছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের পাশে পুলিশ, প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ ইসলাম ধর্মীয় লোকজন ও এলাকাবাসী দাড়িঁয়েছে। তারা আমাদের সাথে আছে। আমরা অপরাধীদের বিচার চাই।

মহাদেবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান বলেন, আমাদের এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চমৎকার। বিগত ফ্যাসিস্ট পতিত সরকারের যড়ষন্ত্রকারীরাই এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে এলাকবাসী মনে করে।

মন্দিরের প্রতিবেশী পবিত্র জানায়, আমার বাড়ির পাশেই মন্দির। সকালে সবার কাছে শুনে এসে দেখলাম, কালী প্রতিমা ও শীতলা প্রতিমার হাত ভাঙ্গা এবং মাথায় ক্ষত। এমন অবস্থায় প্রশাসনকে জানানো হলে পুলিশের কর্মকর্তা, আর্মি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ দায়িত্বশীল সবাই এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কামাল হোসেন বলেন, ‘ঘটনা জানার সাথে সাথেই আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোসাম্মৎ ইয়াসমিন খাতুন জানান, বিগত ফ্যাসিস্টদের লোকেরাই দেশকে অস্থিতিশীল করা, শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করাসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে হয়তো এই নির্জন স্থানে এমন অপকর্ম সংগঠিত করেছে। তবে পুরো জেলায় দারুণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজ করছে। কোথাও কোনো সমস্যা নেই। আমরা সবার সাথেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। মন্দিরের ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া সামনে যেন আর এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সাদা পোশাকে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

জেলা প্রশাসক যুগ্ম সচিব ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, বিগত সময়েও মানিকগঞ্জে কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই দূর্গা পূজাসহ সকল ধর্মের বিভিন্ন অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই সকল স্ট্রেক হোল্ডারদের নিয়ে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি। এই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে পানি ঘোলা করা বা অপপ্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ঠ করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো অপরাধীকেই ছাড় দেয়া হবে না।

এলাকাবাসী বলেন, আওয়ামী চক্রান্তের অংশ হিসেবেই রাতের আঁধারে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। পূজার আগেই তারা কিছু ঘটনা ঘটিয়ে ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করানোর জন্যেই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: আলী আকবর বলেন, দেশে বিশৃঙ্খলা লাগনোর জন্যেই পলাতক বাহিনীর লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলেই স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছে।

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা পশ্চিম অঞ্চলের টিম সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, এবি পার্টির জেলার প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট রফিকুর ইসলাম জনিসহ রাজনৈতিক নেতারা।