অবারিত হলো রোকেয়া চর্চা ও গবেষণার দ্বার

পায়রাবন্দের স্মৃতিকেন্দ্রের সাথে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তি

অবশেষে দীর্ঘ দুই যুগের অচলাবস্থা কেটে রংপুরের পায়রাবন্দের রোকেয়া স্মতিকেন্দ্রটি সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অ্যাকাডেমিকভাবে একিভূত হলো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
পায়রাবন্দের স্মৃতিকেন্দ্রের সাথে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তি
পায়রাবন্দের স্মৃতিকেন্দ্রের সাথে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তি |নয়া দিগন্ত

অবশেষে দীর্ঘ দুই যুগের অচলাবস্থা কেটে রংপুরের পায়রাবন্দের রোকেয়া স্মতিকেন্দ্রটি সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে অবকাঠামো এবং অ্যাকাডেমিকভাবে একিভূত হলো রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। এর মধ্য দিয়ে রোকেয়া চর্চা ও গবেষণার নয়া দ্বার উম্মোচন হওয়ার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। স্মৃতি কেন্দ্রটিতে একটি বিশ্বমানের রোকেয়া আর্কাইভ প্রতিষ্ঠারও ঘোষণা দিয়েছে বাংলা অ্যাকাডেমি।

মঙ্গলবার ( ৯ ডিসেম্বর) রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৪৫তম জন্ম ও ৯৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপনের ফাঁকে দুপুর ২টার দিকে ঐতিহাসিক এই সমঝোতা স্মারক হয় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট রুমে। এর মাধ্যমে বাংলা অ্যাকাডেমি পরিচলিত পায়রাবন্দের স্মৃতি কেন্দ্রটির সাথে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অবকঠোমামো এবং অ্যাকাডেমিকভাবে একিভূত হলো। এতে সই করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এম শওকাত আলী ও বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম।

এসময় বাংলা অ্যাকাডেমির সচিব, ছাত্র উপদেষ্টা প্রফেসর ইলিয়াস প্রামানিক, রেজিষ্টার ড. হারুন অর রশিদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক ও বাংলা অ্যাকাডেমির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্য দিয়ে উভয়পক্ষ রোকেয়া চর্চা, স্মৃতি রক্ষা ও গবেষণায় যেকোনো উদ্যোগ গ্রহণসহ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।

সমঝোতা চুক্তি স্মারকে সই করার পর বাংলা অ্যাকাডেমি মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম জানান, এই সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে যেটা রোকেয়ার জন্মসূত্রে স্মৃতি বিজরিত বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল যা রোকেয়ার সাথে সম্পৃক্ত এবং তার নামানুসারে স্মৃতি কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথতায় রোকেয়া চর্চা এবং অনসঙ্গীয় নানান গবেষণায় আমরা আশা করছি ভালো ফল আগামী দিনগুলোতে দেখতে পাবো। বাংলা অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে আমরা আরো অনেক কিছু করার অনুপ্রেরণাবোধ করবো, তখন আমরা বেরোবিকে সঙ্গে পাবো। বেরোবির দিক থেকে নানা ধরণের উদ্যোগের আকাঙক্ষা অথবা প্রেরণা অনুভূত হবে। তখন তারা বাংলা অ্যাকাডেমির এই কেন্দ্রকে সঙ্গে পাবে।

চুক্তিতে সই করে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. এম শওকাত আলী জানান, ‘সমঝোতার মাধ্যমে রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি উত্তরবঙ্গে রোকেয়া চর্চা গবেষণা এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় একটা হাব তৈরি হলো। রোকেয়ার দর্শনটা শুধু ৯ ডিসেম্বরেই নয়, সেখানে আমরা সব সময় রোকেয়া চর্চা করতে পারবো। তাদের এবং আমাদের অবকাঠামো, লোকবল সব কিছু দিয়েই আমাদের এই কাজটা হবে। এর মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা ওখানে গিয়ে তার ভিটেমাটিতে বসে তাকে ধারণ করে গবেষণা ও চর্চা করতে পারবে। এটা শুধু কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। যাতে বাস্তবে রুপ দান করতে পারি। সেই বিষয়টাও আমরা সবাই অবজার্ভ করবো।’

এর আগে ক্যাম্পাসে দিনটিকে ঘিরে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন শিক্ষক কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও রোকেয়া অনুরাগিরা। পরে স্বাধীনতা স্মারকে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও রোকেয়া পাঠ স্মারকগ্রন্থের উম্মোচন। ইউজিসি সদস্য ড. মাছুদা হাবিব, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর হোসেন উদ্দিন শেখরসহ শিক্ষাবিদরা আলোচনায় অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা জানলেন। রোকেয়ার কারণেই নারীদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। পরে কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

আয়োজনে অংশ নেয়া রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব রিসার্স অ্যাক্সিলেন্সের সিনিয়র কর্মকর্তা খন্দকার মেহজাবিন ইলাহি জানান, ‘আমরা গর্বিত যে, রোকেয়া এই রংপুর জেলায় জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। নারীরা এখনো সর্বাবস্থায় সর্বক্ষেত্রে এখনো পিছিয়ে আছে। আমরা চাই রোকেয়ার কর্ম ও আর্দশকে ঘিরে উত্তরের নারীরা আরো এগিয়ে যাকে। সেটা শুরু হোক পরিবার থেকেই। কোনো পিতা-মাতা যেন কোনো সন্তানের মধ্যে বিভেদ তৈরি না করে। নারীরা যেন পর্যাপ্ত শিক্ষাটুকু তাদের পরিবার থেকেই পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।‘

অংশ নিয়ে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের প্রভাষক নুসরাত জাহান সাদিয়া জানান, ‘রোকেয়ার কারণেই আমাদের নারীদের মুক্তি ‍মিলেছে। এখন নারীদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। ফ্রি মুভমেন্ট করতে পারতেছি। এসব কিছু রোকেয়ার কর্মের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো আমাদের দেশে পুরুষ ও নারীর বৈষম্য আছে। এটা দূর হওয়া উচিৎ। যতুটুকু নারীর প্রাপ্ত ততটুকু নিশ্চিত হওয়া উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইসি বিভাগের সীমান্ত চক্রবর্তি জানালেন, ‘বেগম রোকেয়া শুধু দূরদর্শী লেখকই ছিলেন না। তার ইন্টার একচুয়েল রেভুলেশনটা আমাদের সমাজে ঘটেছে। তার লেখায় নারীদের মধ্যকার কুসংস্কার দূর করেছে। প্যারাডাইম শিফট ইন থট অর্থাৎ চিন্তাভাবনার পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি নারীদের অগ্রগতি নিশ্চিত করেছেন। তার হাত ধরেই নারী পুরুষের সমতার ফিরে এসেছে।’

অংশ নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সাবরিনা আখতার জানালেন, ‘রোকেয়ার আদর্শ আমরা পালন করছি। রোকেয়ার জন্যই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পেরেছি। তিনি না হলে আমরা সেই অন্ধকার ঘরেই থাকতাম। এখন নারীরা অনেক কিছু করছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা পুরুষের থেকে এগিয়ে গেছে রোকেয়ার কারণেই।’

দিবসটিকে ঘিরে আতুর ঘর পায়রাবন্দে রোকেয়ার জন্মভিটায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় বাংলা অ্যাকাডেমি, ডিসিহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন। এসময় ডিসির কাছে কোলকাতা থেকে লাশ পায়রাবন্দে আনার বিষয়ে তথ্য জানতে চান রোকেয়া অনুরাগীরা।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ এনামুল আহসান বলেন, ‘লাশ কোলকাতা থেকে আনার একটা দাবির কথা শুনছি। আমি নতুন এসেছি। এবিষয়ে কাগজপত্র দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

অন্যদিকে স্মৃতিকেন্দ্রটিতে বিশ্বমানের আর্কাইভ গড়ে তোলার কথা জানান বাংলা অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ আজম।

তিনি জানান, রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্রটিকে আমরা পূর্নাঙ্গ করার বিষয়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা চুক্তি একটা বড় দিক। এছাড়াও কেন্দ্রের পাঠাগারটিকে ঘিরে একটি বিশেষায়িত আর্কাইভ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে এখানে দেশী-বিদেশী গবেষক এবং ব্যক্তিকে আসতে বাধ্য করবে। এই আর্কাইভ রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশেপাশের যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোকে প্রাকটিক্যালি উপকৃত করবে। এ ধরণের নানা উদ্যোগ নিয়ে কেন্দ্রটিকে সজিব এবং সচল করার উদ্যোগ নিয়েছি।

রোকেয়া দিবস ঘিরে পায়রাবন্দে স্মারক বক্তৃতাসহ তিনদিনের নানা আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। আছে মেলাও।