সিডরের সেই ভয়াল ১৫ নভেম্বর শনিবার

‘ওই ঝড়ে উপকূলীয় এলাকাসহ ৩০টি জেলায় প্রাণ হারিয়েছিলো সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিলো আরো সহস্রাধিক। সরকারি হিসেবে ২০ লাখ ঘরবাড়ি, প্রায় ৪০ লাখ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। মৃত্যু হয় ৪ লাখ ৬৮ হাজার গবাদি পশুর।’

আযাদ আলাউদ্দীন, বরিশাল ব্যুরো
সিডরে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলবর্তী জেলাগুলো (ছবিতে বামে) এবং সিডর পরবর্তী সময়ে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিল দৈনিক নয়া দিগন্ত পরিবার
সিডরে লন্ডভন্ড হয়ে যায় উপকূলবর্তী জেলাগুলো (ছবিতে বামে) এবং সিডর পরবর্তী সময়ে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছিল দৈনিক নয়া দিগন্ত পরিবার |ছবি : নয়া দিগন্ত

সিডরের ভয়াল সেই ১৫ নভেম্বর শনিবার। ২০০৭ সালের দুঃসহ সেই স্মৃতি আজো কাঁদায় বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় ৩০ জেলার স্বজনহারা মানুষদের।

১৮ বছর আগের এই দিনে সিডর নামক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ভয়াবহ আঘাত হেনেছিলো দক্ষিণের উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে। লন্ডভন্ড করে দিয়েছিলো সমগ্র উপকূলকে।

শতাব্দীর ভয়াবহ ওই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলো সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিলো আরো সহস্রাধিক। সে সময়ে বেঁচে যাওয়াদের স্বজন হারানোর স্মৃতি এখনো তাদের বেদনা বিধুর করছে।

সূত্রমতে, সেদিন মুহূর্তের মধ্যেই প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় জনপথগুলো মৃত্যুপূরীতে পরিণত হয়েছিলো। রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মাঠ-ঘাট এমনকি গাছের সাথে ঝুলে ছিলো অনেক মানুষের লাশ। দুর্যোগের সেদিন গৃহহীন হয় লাখ লাখ মানুষ।

সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির হয় বরিশাল, বরগুনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায়। বহু মানুষ তাদের প্রিয়জনের লাশও খুঁজে পায়নি। ঘূর্ণিঝড়ের পর টানা দু’মাস পর্যন্ত স্বজন হারানোদের কান্নায় উপকূলের আকাশ বাতাস ভারি ছিলো। অতীতের সবকটি ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে ২০০৭ সালের সিডর নামের ঝড়টি ছিলো প্রবল শক্তিশালী।

বরিশালের গৌরনদীর হরিসেনা গ্রামের দুলাল সরদার স্বজন হারানোদের একজন। সেদিনের ভয়াল স্মৃতির বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি এখনো আঁতকে ওঠেন। বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে ছিলাম। এরপর মধ্যরাতে শুরু হয় সিডরের তাণ্ডব। মুহূর্তের মধ্যে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশ্ববর্তী হরিসেনা এলাকার সু-বিশাল একটি গাছ এসে উপড়ে পড়ে আমার বসতঘরের ওপর।

তিনি বলেন, এতে আমি গুরুতর আহত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি। দু’দিন পর যখন জ্ঞান ফিরে আসে তখন আমি গৌরনদী হাসপাতালের চিকিৎসাধীন ছিলাম। এ ঘটনার চার দিন পর জানতে পারি- ওই দিন রাতের গাছ চাঁপায় আমার ৭ বছরের আদরের ছেলে শামীম মারা গেছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, সিডরের ভয়াবহতা এতোই নির্মম হবে তা বুঝে উঠতে পারেনি উপকূলের বাসিন্দারা। সিডরের মাত্র কয়েক মাস পূর্বে সুনামির পূর্বাভাস ও তা আঘাত না হানায় সিডর নিয়ে আতঙ্ক ছিল না এ অঞ্চলের মানুষের মাঝে।

পনি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার তথ্য মতে, ওই ঝড়ে উপকূলীয় এলাকাসহ ৩০টি জেলায় প্রাণ হারিয়েছিলো সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিলো আরো সহস্রাধিক। সরকারি হিসেবে ২০ লাখ ঘরবাড়ি, প্রায় ৪০ লাখ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। মৃত্যু হয় ৪ লাখ ৬৮ হাজার গবাদি পশুর।

এরমধ্যে খুলনা বিভাগের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরায় মারা গেছে ৭০ হাজার গবাদি পশু। বাকি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়।

১৫ নভেম্বর দিনটিকে স্মরণ রাখতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় শোক পালন ও দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।