বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ, চাকরি হারাচ্ছেন আওয়ামীপন্থী শিক্ষক

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানকে চাকুরিচ্যুত ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।

তাওহীদুল হক সিয়াম, বেরোবি

Location :

Rangpur

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষক নিয়োগ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তাবিউর রহমান প্রধানকে চাকুরিচ্যুত ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট।

বুধবার (২৬ নভেম্বর) ১১৮ তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।

২০১৮ সালের চাকুরি বিধি অনুযায়ী কাউকে চাকুরিচ্যুত করতে হলে আত্নপক্ষ সমর্থন করে চিঠি ইস্যু করতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের নেতা তাবিউর রহমান প্রধানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন থেকে জালিয়াতি করে নিয়োগ পাওয়ার অভিযোগ ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ইউজিসির তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজপত্র অনুসন্ধান করে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক (স্থায়ী) পদে একটি এবং সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষকের দুটি স্থায়ী পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তাবিউর রহমান প্রধানসহ মোট ২২ জন প্রভাষক পদে দরখাস্ত করেন। পরের বছরের ১৩ জানুয়ারি প্রভাষক পদের জন্য বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই বোর্ড যথাক্রমে মোহা. মাহামুদুল হক ও নিয়ামুন নাহারকে অপেক্ষমান তালিকায় রেখে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু বাছাই বোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, ‘জালিয়াতি’ করে অপেক্ষমাণ তালিকায় তৃতীয় হিসেবে তাবিউর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বাছাইবোর্ডের পর।

বাছাইবোর্ডের সুপারিশপত্রে দেখা যায়, কম্পিউটারে কম্পোজকৃত ‘মেধাক্রমানুসারে’ শব্দটি কলম দিয়ে কেটে ‘যে কোনো’ শব্দটি লেখা হয়েছে সুপারিশপত্রে। ওই সুপারিশপত্রে বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্তভাবে মনোনয়নপ্রাপ্ত আবেদনকারী ওই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করতে অপারগ হলে অপেক্ষামান তালিকা থেকে প্রথমজনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হলো। অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমজন যোগদানে অপারগ হলে দ্বিতীয় জনকে নিয়োগের সুপারিশ করা হলো।’

তালিকায় তৃতীয়জন সম্পর্কে কিছুই বলা নেই কারণ ওই সিরিয়ালই ছিল না। এজন্য যে দুটি পদের বিপরীতে দুজনকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছিল। এরপর ১৪ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২১তম সিন্ডিকেট অপেক্ষমাণ তালিকায় দুজনের পরিবর্তে তৃতীয়জন তাবিউর রহমানের নাম অনুমোদন করা হয় এবং বলা হয় নিচের তালিকা থেকে ‘যে কাউকে’ নিয়োগ দেয়া যাবে। সিরিয়াল রাখা হয় ১. মোহা. মাহামুদুল হক ২. নিয়ামুন নাহার ৩. তাবিউর রহমান প্রধান। এতে মেধাতালিকার প্রথমজন যোগদান না করায় তার নিয়োগ বাতিল করা হয়।

উল্লেখ্য যে, অপেক্ষামাণ তালিকায় দুজনের পরিবর্তে ‘জালিয়াতি’ করে তাবিউরের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন দেয়া হয়।

একই সিন্ডিকেটে (২১তম) অনুমোদনপ্রাপ্ত ‘যে কাউকে’ শব্দটি ২২তম সিন্ডিকেটে সিন্ডিকেট সদস্যদের আপত্তির কারণে বাতিল করা হয়। অর্থাৎ অপেক্ষমাণ তালিকার প্রথমজন মোহা. মাহামুদুল হক এবং দ্বিতীয়জন নিয়ামুন নাহার নিয়োগ পান সুপারিশ ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। ২২তম সিন্ডিকেটেও জালিয়াতি করা হয়। ‘যে কাউকে’ শব্দটি বাতিল করা হলেও অপেক্ষমাণ তালিকায় সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়। এতে নিয়োগের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত ২ জনের নাম লেখার সময় প্রথমজন হিসেবে তাবিউর রহমান প্রধান এবং দ্বিতীয়জন হিসেবে নিয়ামুন নাহানের নাম লেখা হয়। অপেক্ষমাণ তালিকায় প্রথম মোহা. মাহামুদুল হকের নাম বাদ দিয়ে তালিকার সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়।

এছাড়া তাবিউর রহমান প্রধানকে অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়। অথচ নিয়োগ বাছাইবোর্ড ছিল প্রভাষক পদে। অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল, কিন্তু কেউ দরখাস্ত না করায় অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের কোন বাছাইবোর্ড হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদে প্রার্থী পাওয়া না গেলে এর বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগ দিতে হলে নতুন করে বিজ্ঞাপন দিতে হয় কিন্তু তাবিউর রহমানের নিয়োগের সময় এই নিয়মও অনুসরণ করা হয়নি।

এদিকে তাবিউর রহমান সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষক পদের বিপরীতে দরখাস্ত করলেও ২৫ ফেব্রুয়ারি ২২তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যাপক/সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে প্রভাষক পদে ‘অবৈধভাবে’ নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে যোগদান করেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চাকুরিচ্যুত শিক্ষক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, আমি এই বিষয়ে ফোনে কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মো: শওকত আলী বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে কিন্তু রেজুলেশনটা আগে পাস হোক, তারপর অফিসিয়ালি জানানো হবে।