দেশের শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী রশিদ অ্যাগ্রো ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রশিদকে পুলিশ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরতলী বটতৈল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোশাররফর হোসেন জানান, আব্দুর রশিদকে আকিজ গ্রুপের ৫১ লাখের বেশি টাকা আত্মসাতের একটি নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে থানায় আরো ১৯টি ওয়ারেন্ট রয়েছে। দীর্ঘ দিন ভদ্র লোকের খোলসে তিনি হাজার হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপী হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে চলা ফেরা করতেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, আব্দুর রশিদ দেশের শীর্ষ চাল ব্যবসায়ী। তার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োমিত উৎপাদন চলা সত্বেও তিনি দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপী হলেও কোনো ব্যাংকের ঋণ তিনি পরিশোধ করছেন না এমনকি ব্যাংকের দেয়া তাগাদা এবং আদালতের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করছেন না।
স্থানীয়রা জানান, একাধিক আলিশান বাড়ি, বিভিন্ন মডেলের একাধিক দামী গাড়ি, ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, বগুড়া, এবং নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা মূল্যবান জমি, একাধিক চালু কারখানা সব কিছুই স্বাভাবিক উৎপাদন ও মার্কেটিং চললেও দেশের বৃহত্তর চাল মিল মালিক কুষ্টিয়ার সন্তান বাংলাদেশ মেজর অটো হ্যাসকিন চাল মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশিদ কমপক্ষে ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট এক হাজার ২২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি পরিশোধ না করায় ঋণ খেলাপী হয়েছেন। এর আগে একজন পাওনাদারের করা মামলায় তিনি জেলে গেলেও জামিনে বের হয়েও তিনি একটি টাকা পরিশোধ করেননি। ব্যাংকের ঋণ তসরুপ করে নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি করলেও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধে গড়িমসি করছেন তিনি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ট্রাষ্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক পিএলসি, প্রিমিয়ার ব্যাংক, আইডিএলসি লিজিং কোম্পানী, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সিভিসিএফএল, মেরিডিয়াম ফাইন্যান্স, থেকে বেশ কয়েক বছর আগে নেয়া ১ হাজার ২২কোটি ৬১ লাখ ৯২ হাজার টাকার এই ঋণ নিয়েছেন যা সুদে আসলে বেড়ে হয়েছে অনেক বেশি।
ইসলামী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ মেজর হ্যাসকিন চাল মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি ও রশিদ অ্যাগ্রোফুডের কর্ণধান আব্দুর রশিদ কুষ্টিয়ার পোড়াদহের বল্লভপুরে অবস্থিত ‘রশিদ এগ্রোফুড প্রোডাক্টস লিঃ’ এর নামে ২০২২ সালে মোট ১৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। বর্তমান ওই ঋনের সুদ আসলে অনাদায়ী দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০কোটি টাকা। ‘রশিদ অ্যাগ্রোফুড প্রোডাক্ট লি:’র নামে অগ্রণী ব্যাংক মজমপুর শাখা থেকে ১৫৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বর্তমানে সুদে আসলে দাঁড়িয়েছে ১৬০ কোটি টাকার বেশি। ঋণ পরিশোধ না করায় ২৩সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঋণ খেলাপী হিসেবে বিবেচিত হন।
ইতিমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষ থেকে ফৌজদারী আদালতে ১০টি মামলা বিচারাধিন রয়েছে যা ইতিমধ্যে চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়।
ইসলামী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখা থেকে পাবনার ঈশ্বরদী বহরপুর এলাকায় অবিস্থিত ‘রশিদ ওয়েল মিলস লিঃ’ এর নামে ৪৯ কোটি ঋণ গ্রহণ করা হয়। সুদে আসলে বর্তমান এঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯কোটি টাকা। দীর্ঘ দিন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে শুধু আশ্বাস দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছেন মাত্র? কোনো সমাধান না পাওয়ায় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ‘রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্ট লিঃ’ এর নামে এবং ১৮ মে ‘রশিদ ওয়েল মিলস লি:’ এর নামে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি দিতে বাধ্য হয়েছেন।
সূত্রটি আরো জানায়, ইতিমধ্যে ইসলামী ব্যাংক কুষ্টিয়া শাখার করা অর্থঋণ আদালতে ৪৫টি মামলা বিচারাধিন রয়েছে এই দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে।