৩০ অক্টোবরের মধ্যে বেরোবিকসু নির্বাচন

৫৯ ঘণ্টার মাথায় শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন প্রত্যাহার

মঙ্গলবার রাত সোয়া ১০টার দিকে অডিও কলে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হন বেরোবিকসু খসরা আইন চুড়ান্ত কমিটির প্রধান ইউজিসি সদস্য প্রফেসর তানজিম উদ্দিন খান।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
৫৯ ঘণ্টার মাথায় শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন প্রত্যাহার
৫৯ ঘণ্টার মাথায় শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন প্রত্যাহার |নয়া দিগন্ত

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-ইউজিসির প্রতিশ্রুতিতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-বেরোবিকসু নির্বাচনের দাবিতে বসা আমরণ অনশন ৫৯ ঘণ্টার মাথায় প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষার্থীরা। নির্বাচনে ভোট গ্রহণের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ২৬ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে যে কোনো দিন।

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাত সোয়া ১০টার দিকে অডিও কলে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হন বেরোবিকসু খসরা আইন চুড়ান্ত কমিটির প্রধান ইউজিসি সদস্য প্রফেসর তানজিম উদ্দিন খান।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির কথা শোনেন। পরে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বৈঠক করে ছাত্র সংসদ আইনটির খসরা চুড়ান্ত করে তা বেরোবি আইনেসংযুক্ত করতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাবো। এরপরই সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে সরকার।

তিনি বলেন, মূলত যে সময়টুকু লাগছে সেটা হলো আইনি নির্ভূল করা। যাতে পরবর্তী সরকার এসে কোনো ভুল ধরতে না পারে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তার কথায় আস্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. শওকাত আলী শিক্ষার্থীদের ডাব খাইয়ে অনশন ভাঙান। শিক্ষার্থীরাও ভিসিকে ডাব খাওয়ান। আমরণ অনশন শুরু করার সময় থেকেই ভিসি, রেজিষ্টার, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ কয়েকজন শিক্ষক এককাপড়েই অফিসে অবস্থান শুরু করেন। তারা বাসায় যাননি।

পরে ভিসি ড. এম শওকাত আলী নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে বলেন, প্রজ্ঞাপন আসা মাত্রই নির্বাচনের সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে তফসিল ঘোষণা করা হবে। আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই বেরোবিকসু নির্বাচনের সকল কাজ সম্পন্ন হবে। আগামী ২৬ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই যেকোনো দিন ভোটগ্রহণ করা হবে।

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন আমরণ অনশনে বসা শিক্ষার্থীরা। অনশনে বসা ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান আশিক জানান, আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। সেকারণে আমরণ অনশনে বসা। আমরা চেয়েছি লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি শহীদ আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে না ফিরুক। শিক্ষার্থীদের সব কথা নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রশাসনের সাথে বার্গেডিং হোক। ৬০ ঘণ্টা পর ইউজিসি আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন। আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা অনশন প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু আবার যেন আন্দোলনে নামতে না হয়।

অনশনে বসা খোকন ইসলাম বলেন, ষড়যন্ত্র এবং আন্দোলন বানচালের চেষ্টা সত্বেও দাবি আদায়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে আমাদের আন্দোলন সফল হয়েছে। গত তিনদিনে আমাদের অনেকের সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। আমাদের মাঝখান থেকে দুইভাই উঠে গেছেন। সেটা একটা মনোমালিন্য হতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠি সাংবাদিক ভাইদের সাথে মনোমালিন্য হয়েছে। তারপরেও আমরা ঐক্যে ছিলাম বলেই আন্দোলন সফল হলো। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখটা ঘোষণা এবং ছাত্র সংসদ পেলে আমরা খুশি হবো। আমরা সবাই আবারো সকল মনোমালিন্য ভুলে গিয়ে আবারো জুলাইয়ের ঐক্যে ফিরে যেতে চাই।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন জানান, নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণা দিয়েছে। ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন তাদের ওয়াদা যথাযথভাবে পালন করেন। সেই আশা রাখছি। আমাদের ভাইদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরণ অনশন ভাঙ্গানো হয়েছে। আমরা তার বাস্তবায়ন চাই। যারা অনশনে বসেছিলেন, যারা সংহতি জানিয়েছেন, ভিসিসহ যারা আমাদের জন্য বাসায় যান নি। আমাদের সাথে ছিলেন। সবার প্রতি কতৃজ্ঞ।

উল্লেখ্য, রোববার (১৯ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ যুক্ত করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে আমরণ অনশনে বসে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে চারজন। অনশন বানচাল করতে প্রশাসনিক ও দলীয় অপচেষ্টার অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে গেলো তিনমাস থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন তারা।