অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ প্রক্রিয়া টেকসই করতে হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ময়মনসিংহ নগরীর শহীদ শাহাবুদ্দিন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘লোকাল লেভেল স্টেকহোল্ডার্স কনসালটেশন অন ইনক্লুসিভ, স্মুথ অ্যান্ড সাসটেইনেবল এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনাসমূহকে কাজে লাগিয়ে দেশে স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি’র সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্ট এ কর্মশালার আয়োজন করে।
জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ রেজাউল বাসার সিদ্দিকী, এ এইচ এম জাহাঙ্গীর ও ড. মোস্তফা আবিদ খান।
প্যানেল আলোচক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব নেসার আহমেদ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মালেকা বিলকিস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজা মোহাম্মদ গোলাম মাসুম প্রধান, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ও ব্যবসায়ি নেতা এ কে এম মাহবুবুল আলম।
আলোচনায় অংশ নেন সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা খাতুন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ, জামায়াতের জেলা আমির আবদুল করিম, মহানগর আমির কামরুল এহসান এমরুল, সেক্রেটারি শহীদুল্লাহ কায়সার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওয়ালিউল্লাহ অলি, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. আক্তারুজ্জামান। কর্মশালায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বলেন, ‘অতিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে করতে আমাদের বেসরকারি খাতের একটি শক্তিশালী সক্ষমতা সৃষ্টি হয়েছে এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে যা আসন্ন সময়ে উত্তরণজনিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতেও আমাদের সহায়তা করবে।’
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, ‘ঢাকা ও ময়মনসিংহের মধ্যে দ্রুতগতির রেলসংযোগ স্থাপন, মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যে কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেন। কৃষি ক্ষেত্রে ময়মনসিংহের অপরিসীম সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করে বক্তারা কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, সকল পর্যায়ের কৃষকদের নিকট কৃষিপণ্যের যথাযথ সংরক্ষণ পদ্ধতি পৌঁছে দেয়া, কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আয়োজন এবং কৃষিপণ্যের যথাযথ বাজারজাতকরণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এই সম্ভাবনার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের প্রয়োজন প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, ব্র্যান্ডিং এবং বাজার সংযোগ।’
প্রবন্ধকার এ এইচ এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কি প্রভাব পড়তে পারে বা নতুন কি সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে সেই বিষয়ে স্থানীয় বেসরকারি খাত বিশেষত রফতামুখী শিল্পের প্রতিনিধিদের মধ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এর ত্রি-বার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সকল মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। পাঁচ বছর প্রস্তুতিকালীন সময় শেষে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে।
উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাবসমূহ চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, উত্তরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং উক্ত ঐতিহাসিক অর্জনকে দেশে বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্যে ইআরডি’র অধীনে সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রজেক্ট (এসএসজিপি) শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং তাঁর ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনাসমূহ সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের অংশীদারদের অবহিত করা এবং উত্তরণ প্রক্রিয়াটি মসৃণ ও টেকসইকরণের প্রক্রিয়ায় তাদেরকে আরো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করতে এসএসজিপি প্রকল্পের সহায়তায় উক্ত কর্মশালার আয়োজন করা হয়।