শিবপুরে পিআইও অফিসের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, কর্মচারী তুহিন বরখাস্ত

‘সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় প্রতারণার মাধ্যমে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস এবং সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্বাক্ষর জাল করে গত ২৭ মে ও ৪ জুন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন।’

শিবপুর (নরসিংদী) সংবাদদাতা

Location :

Shibpur
শিবপুরে পিআইও অফিসের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কর্মচারী তুহিন বরখাস্ত
শিবপুরে পিআইও অফিসের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কর্মচারী তুহিন বরখাস্ত |নয়া দিগন্ত

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের কার্যসহকারী আরিফুল ইসলাম তুহিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) মো: শফিকুল ইসলামের ২ জুলাই তারিখের এক পত্রের মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে। পত্রে বলা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে কার্যসহকারী হিসেবে শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে নিয়োগপ্রাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) কর্মসূচির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চাকরির শর্ত ভঙ্গ করায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।

উল্লেখ্য শিবপুরে সই জালিয়াতি করে শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের টিআর-কাবিখা প্রকল্পের ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ১ জুলাই দুই কর্মচারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বাড়ি থেকে ৫২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১ জুলাই) শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন।

গ্রেফতার দুজন হলেন শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয়ের কার্যসহকারী আরিফুল ইসলাম তুহিন (৩৫) ও পিয়ন আশিক ভূঁইয়া (২৫)। আরিফুল ইসলাম ওরফে তুহিন শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হোসেন আলীর ছেলে। তারা স্বপরিবারে শিবপুর উপজেলা পরিষদের ভেতরে সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন। তাদের গ্রামের বাড়ি পাশ্ববর্তী মনোহরদী উপজেলার চন্দন বাড়ি এলাকায় । আশিক ভূঁইয়া শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে। সে পিআইও অফিসে তুহিনের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন।আশিক সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত নয়।এ ঘটনায় সারা উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়। ধারণা করা হচ্ছে এ ঘটনায় বড় বড় রাঘব বোয়ালরা জড়িত রয়েছেন। তাদের মধ্যে আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান দীর্ঘদিন ধরে পিআইও অফিসে কার্যসহকারী তুহিন একক প্রভাব বিস্তার করে আসছেন। তুহিন এ অফিসে প্রথম পিয়নের কাজ করতেন। পরে তার পিতার এ উপজেলায় চাকরি করার সুবাদে পিআইও অফিস কার্যসহকারী(প্রকল্প) পদে ২০১৭ সনে শিবপুর অফিসেই যোগদান করেন। সে থেকেই পিআইও অফিসের কর্তৃত্ব চলে যায় তার হাতে। কোন পিআইওই তাকে ছাড়া কোন কাজ করতে পারেন না। অফিসের সরকারি প্রকল্পের সকল বিল ভাউচার তুহিন তৈরি করেন এবং টাকা উত্তোলন করেন। প্রকল্পের সভাপতি/সেক্রেটারিরা তার কাছ থেকেই টাকা নিতে হয়। উপজেলা পরিষদের ভেতরে তুহিন তার পিতা মাতা ভাই বোন আত্নীয়স্বজন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করে আসছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর-কাবিখার ৪৩০টি বিল তৈরি করে শিবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। এসব বিল উত্তোলন করে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য উপজেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে জানানো হয়, ৪৩০টি বিলের মধ্যে ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আগেই উত্তোলন করা হয়ে গেছে। পরে সোনালী ব্যাংকের শিবপুর শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট বিলের কপি ও ব্যাংকের পে-স্লিপ তলব করে একাধিক চিঠি পাঠান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন। কিন্তু এর কোনো জবাব না পেয়ে বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সকে (এনএসআই)।

এনএসআইয়ের একটি দল তদন্ত করে দেখতে পায়, অর্থ আত্মসাতের সাথে আরিফুল ইসলাম তুহিন ও আশিক ভূইয়া জড়িত। এনএসআইয়ের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস ও সোনালী ব্যাংক শিবপুর শাখার কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে দুই কর্মচারী টিআর-কাবিখার ৮১টি বিলের ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। মঙ্গলবার রাতে আরিফুল ইসলাম তুহিন ও আশিক ভুইয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁরা দুজন অর্থ আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন।

তারা বলেন, সরকারি দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় প্রতারণার মাধ্যমে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস এবং সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় স্বাক্ষর জাল করে গত ২৭ মে ও ৪ জুন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের থানায় আটক রাখা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক মঙ্গলবার দুপুরে আরিফুল ইসলামের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ৫২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। তুহিন ও আশিক নরসিংদী জেল হাজতে রয়েছে। তাদের মামলা দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।