পর্যটকে মুখরিত তারুয়ার চর

সাদা বালির এ বিচে দারুণ উপভোগ করেন পর্যটকরা। পাশেই সবুজ প্রান্তরে চরে বেড়ায় শত শত গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়া।

রফিকুল হায়দার ফরহাদ

Location :

Bhola
তারুয়ার চরের পর্যটক।
তারুয়ার চরের পর্যটক। |নয়া দিগন্ত

ভোলা জেলার অন্যতম পর্যটন স্পট তারুয়ার চর। এটি ঢাল চরের একটি অংশ। এ চরের সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতি বছর শীতে এখানে হাজার হাজার পর্যটকের ঢল নামে। তবে মেঘনা নদীর মোহনা চর কুকরি মুকরিতে যে পরিমাণ পর্যটক যান তার অর্ধেকও যান না তারুয়ার চরে। কারণ মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা পাড়ি দেয়ার ঝামেলা ও খরচের বিষয়। তবে এরপরও কিছু সাহসী ও অতি উৎসাহী পর্যটক যান এ চরে। এখানে রাত কাটান তারা। কেউ-বা দিনে গিয়ে সন্ধ্যার আগেই কুকুরি মুকরিতে ফেরার জন্য রওয়ানা হন। এবারও শুরু হয়েছে পর্যটকদের তারুয়ার চরে যাওয়া।

মিনি সুন্দরবন খ্যাত চর কুকরি মুকরি থেকে ট্রলারে বা স্পিড বোটে যেতে হয় এ চরে। চার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া করা যায় ট্রলার। তবে স্পিডবোটে ১০ হাজার টাকা লাগে। এখানে থাকার সুবিধা অন্য পর্যটন স্পট কক্সবাজার বা কুয়াকাটার মতো নয়। ভালো মানের কোনো হোটেল নেই। সোনিয়া রিসোর্ট নামে একটি মাত্র হোটেল রয়েছে। টিনের বেড়া দেয়া, টিনের ছাউনি দেয়া এ হোটেলে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন থাকতে পারেন। বাকিদের থাকতে হয় তাবুতে। বিশেষ করে যারা তাবুতে থাকতে পছন্দ করেন তাদের জন্য অন্যতম আদর্শ এ তারুয়ার চর বীচ। বনের ধারে সাগর পাড়ে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে তরুণ পর্যটকরা ক্যাম্প করে থাকেন। কেউ সাথে করে নিয়ে আসেন তাবু। আবার স্থানীয়ভাবেও তাবু পাওয়া যায়। বড় তাবু ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা ভাড়ায় পাওয়া যায়। আর দু’জনের ছোট তাবুর ভাড়া ৪০০ টাকা।

সাদা বালির এ বিচে দারুণ উপভোগ করেন পর্যটকরা। পাশেই সবুজ প্রান্তরে চরে বেড়ায় শত শত গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়া।

অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয় তারুয়ার চরে পর্যটকদের আসা। চলে মার্চ মাস পর্যন্ত। এরপর মেঘনা নদীর মোহনা উত্তাল হয়ে ওঠে। ফলে পর্যটকরা তখন আর ওই দ্বীপের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে যান না। শুধু জীবন বাজি রেখে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদেরই গন্তব্য থাকে এ চর। অবশ্য দুই একজন অতি উৎসাহী পর্যটক তখন সাগরের ঢেউ ডিঙ্গিয়ে এখানে আসেন। এ চরে এক সময় প্রচুর তারুয়া বা লাক্ষা মাছ পাওয়া যেত। তাই চরের নাম দেয়া হয় তারুয়ার চর।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনেই পর্যটকদের ভিড় লাগে তারুয়ার চরে। নিয়মিত পর্যটকদের চর কুকরি মুকরি থেকে তারুয়ার চরে আনা-নেয়া করা মাঝি জাকির বক্স জানান, শুক্রবার ও শনিবারে দেড়শ থেকে দুইশ পর্যটক তারুয়ার চরে যান। অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরো কম।

তাবুতে থাকা পর্যটকরা বিশাল সমুদ্র সৈকতে রাত্রি উদযাপন করেন। রাতে দেখার সুযোগ হয় খাবার সংগ্রহে বের হওয়া শিয়াল। শিয়ালগুলো তাবুর আশেপাশে পর্যটকদের উচ্ছিষ্ট খেতে আসে। কোনো কোনো সময় পর্যটকদের খাবারেও হানা দেয় তারা।

পর্যটকরা স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে নিজেরাই সাথে বয়ে নেয়া চুলায় রান্না করেন। অবশ্য তারা ইচ্ছে করলে সোনিয়া রিসোর্টে খেতে পারেন। এ রিসোর্টে খাবারের দাম তুলনামূলকভাবে একটু বেশী।

তারুয়ার চর ও কুকরি মুকরি যেতে ঢাকা থেকে পর্যটকরা সদরঘাট থেকে সন্ধ্যায় ভোলার চর ফ্যাশনের বেতুয়াগামী লঞ্চে ওঠেন। এরপর সারারাত লঞ্চ ভ্রমণ শেষে ভোরে বেতুয়া ঘাটে পৌঁছান। সেখানে সকালের নাস্তা শেষে অটোতে করে কচ্চইবার ঘাটে পৌঁছে ট্রলারে বা স্পিড বোটে চর কুকরি মুকরি যান। এরপর অটোতে কুকুরি মুকরির খাল পাড়ে পৌঁছাতে হয়। সেখান থেকে বনের ভেতর দিয়ে ১০ থেকে ১২ মিনিটের হাঁটা পথ শেষে চর পালিতা ডোশ বা চর পাতিরা খালের পাড়ে থাকে ট্রলার। সেখান থেকে ট্রলারে দেড় ঘণ্টার পানি পথ পেরিয়ে তারুয়ার চরে পৌঁছান তারা।