নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তিন সাংবাদিক মারধর ও হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এ সময় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তাদের বহনকারী মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়, মোবাইল, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, আইডি কার্ড ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীরা।
একইসময় ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে চালিয়ে দিতে চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা সাংবাদিকদেরকে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে রাখেন। এ ঘটনায় অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদানসহ মাধবদী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী সংবাদকর্মীরা জানান, মহিষাশুড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি কাউছার আহমেদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ইউপিতে সেবা নিতে আসা লোকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়া, বিভিন্ন সময় চাল চুরি, জমি দখল, মানুষকে জিম্মি করাসহ নানা অপরাধের অভিযোগ করে আসছিলো ভুক্তভোগীরা।
এর প্রেক্ষিতে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে সরেজমিনে ইউনিয়ন পরিষদে যান আনন্দ টিভির নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি ও নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: মনিরুজ্জামান, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার মাধবদী প্রতিনিধি মো: জাকারিয়া এবং নিউজ টোয়েন্টি ওয়ান বাংলা টিভির স্টাফ রিপোর্টার মো: শাহিন মিয়া।
এ সময় পরিষদের সামনে একজন ভুক্তভোগীর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে চেয়ারম্যান অফিসে বসে সিসিটিভিতে এটা প্রত্যক্ষ করেন এবং তার অনুসারীদের ডেকে আনেন। অবস্থা আঁচ করতে পেরে আনন্দ টিভির প্রতিনিধি মনিরুজ্জামান সহ বাকি দুই সাংবাদিক চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে চেয়ারম্যানের ডেকে আনা লোকজন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধোর করেন। এতে তিনজনই আহত হয়।
আহত সাংবাদিক মনিরুজ্জামান জানান, চেয়ারম্যানের সাঙ্গপাঙ্গদের হামলার একপর্যায়ে তিনি জীবন বাঁচিয়ে ফিরে এলেও বাকি দুই সাংবাদিককে আটকে রাখা হয়। তাদেরকে মারধরের পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের খালি প্যাডে জোরপূর্বক সাক্ষর নেয়া হয়।
তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাটি মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে অবগত করলে তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান আর এই খবরে চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দ্রুত পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে সাংবাদিক মকবুল হোসেনসহ স্থানীয় অন্যান্য সংবাদকর্মীরা মহিষাশুড়া ইউপি কাযালয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সোমবার রাতে সাংবাদিক মনিরুজ্জামান বাদি হয়ে মাধবদী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী বলেন, চেয়ারম্যান একজন ‘স্বৈরাচার’ লুচা এবং ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ হিসেবে এলাকায় ‘রামরাজত্ব’ কায়েম করেছেন। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সাদা কাগজে সাক্ষর নেয়ার ঘটনা নতুন নয়। তার বিরুদ্ধে আদালতে বিভিন্ন অপরাধে মামলাও রয়েছে। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর নরসিংদী জেলা কমিটির সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তার বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দৃশ্যমান থাকার পরও পদ-পদবিতে তিনি বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন তার খুটির জোর কোথায়??? সাংবাদিকদের ওপর এই হামলার ঘটনায় নাগরিক টেলিভিশন এর নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি শাওন খন্দকার শাহিন বলেন, ‘বিগত সময় এই অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সারা বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র ইউপি চেয়ারম্যান যিনি আওয়ামী লীগের স্থানীয় কোন্দলে তাদের প্রার্থীকেই পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে রিলিফের চাল চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও দেখার কেউ নেই।
এ ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মুফতি কাউছারের দলীয় পদ সহ ইউপি চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি চাই।
এদিকে, এ ঘটনায় মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাধবদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে মাধবদী প্রেসক্লাব সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক নেতারা এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চেয়ারম্যান মুফতি কাউছারের বিচার দাবি জানান। মানববন্ধন শেষে সাংবাদিকরা মৌন মিছিল নিয়ে মাধবদী পৌরসভায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
এ সময় তারা ঘটনাটি ইউএনওকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানান। নরসিংদী প্রেসক্লাব ও নরসিংদী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাব এই হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের অবিলম্বে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।