সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, গত ১৫ বছরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়নি। সিলেটের পানি সমস্যার সমাধান হয়নি। রেলের টিকেট পাওয়া যায় না। রেল লাইনের দুরাবস্থা। সার্বিকভাবে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত সিলেটবাসী।
শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল (র.) -এর মাজার প্রাঙ্গণে মশাল মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিলেট নগরীর চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াব না।
তিনি সিলেটের সাথে উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিবাদে রোববার সিলেট নগরীতে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দেন। রোববার বেলা ১১টায় সিটি পয়েন্ট থেকে সুরমা মার্কেট পয়েন্ট পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করার কথা জানান। এ কর্মসূচি সফলে শনিবার সন্ধ্যায় নগরে মশাল মিছিল বের করা হয়। সিলেটের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায়ে গঠিত ‘সিলেট আন্দোলন’ -এর উদ্যোগে এ কমর্সচির ডাক দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে আরিফুল হক চৌধুরীর কুমারপাড়াস্থ বাসায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা অংশ নেন।
সভায় বলা হয়, উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেট নানাভাবে বঞ্চনার শিকার। এ বিভাগের উন্নয়নবৈষম্য দূর করতে নগরীর কোর্ট পয়েন্টে ১২ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দেয়া হয়। এরই মধ্যে আল্টিমেটামের সময়সীমা শেষ হলেও দাবি বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। এ অঞ্চলের উন্নয়ন বঞ্চনা ঘুচাতে ‘সিলেট আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয় এবং নবগঠিত এ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে রোববার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
সভায় আরিফুল হক চৌধুরী আরো জানান, সড়ক ও রেল যোগাযোগের বিষয়ে বিদ্যমান সমস্যাবলী নিয়ে তিনি সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা এবং রেল উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সাথে সাক্ষাত করেন। সাক্ষাতকালে তিনি জানিয়েছেন, এ সমস্যা সম্পর্কে তারা ওয়াকিবহাল এবং তিনি নিজে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পরিদর্শন করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। গত সপ্তাহখানেক ধরে লোকজন ছয় থেকে সাত ঘণ্টায় ঢাকায় যাতায়াত করতে পারছেন।
আরিফুল হক চৌধুরী সড়ক যোগাযোগ নিয়ে কিছুটা সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও রেলের টিকেটসহ অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে এখনো কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি বলে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, উপদেষ্টা সিলেটের জন্য ১০টি বগি বরাদ্দের আশ্বাস তাকে দিয়েছেন। বিমান ভাড়ার বিষয়টি এখনো উদ্বেগের।
আরিফুল হক চৌধুরী সভায় জানান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সিলেট সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। সিলেটের জন্য ২০২১ সালে সিলেটের উপজেলা ও ইউনিয়নসমুহের রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য ২৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, স্থানীয় সরকার সচিব ফের প্রকল্পটির ডিপিপি (ডেভেলপম্যান্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) তৈরি করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের জন্য হতাশার। বাদাঘাটে ওয়াটার ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপনেরও তেমন অগ্রগতি নেই। এ অবস্থায় আগামী রমজানে সিলেটে পানির জন্য হাহাকার তৈরি হতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সিলেটের মানুষের রাজপথে নামা ছাড়া সামনে কোনো উপায় নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।



