চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের পশ্চিম দুর্গাপুর গ্রামের যুবক সাইফুদ্দিন মাহমুদ রায়হান (২১) দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পথে দালাল চক্রের প্রতারণায় জাম্বিয়ার দুর্গম পাহাড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মৃত্যুর সাত দিন পর গত সোমবার রাত ১টায় তার পরিবারের কাছে খবর পৌঁছায়।
রায়হান দরবেশ আলী সারেং বাড়ির আফ্রিকা প্রবাসী ছালাহ উদ্দিনের বড় ছেলে। তিনি ওয়াহিদুন্নেসা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ২০২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার দুই ভাই- সিয়াম উদ্দিন রিহান ও আল আমিন আবির।
সূত্রে জানা গেছে, আফ্রিকায় বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করতে রায়হান দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। এ লক্ষ্যে নোয়াখালীর জয়নাল আবেদীন ফারুককে পাঁচ লাখ টাকা দেন তার পরিবার। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রায়হানসহ ছয় তরুণ ঢাকার চাংখারপুলে মুনিম শাহরিয়ার থেকে পাসপোর্ট ও এয়ার টিকিট বুঝে নিয়ে রওনা দেন। কথা ছিল দুবাই বা কাতার হয়ে আফ্রিকায় পৌঁছানোর। কিন্তু দালাল চক্র তাদের নিয়ে যায় ইথিওপিয়ায়। সেখান থেকে সড়কপথে মালাও হয়ে কঙ্গো পৌঁছায় তারা। পরে কঙ্গোর সীমান্ত থেকে জাম্বিয়ার পাহাড়ি পথে পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন রায়হান।
তার সফরসঙ্গীদের ভাষ্যমতে, পথ দেখানো স্থানীয় কৃষ্ণাঙ্গরা রায়হানকে কাঁধে নিয়ে যাওয়ার সময় শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে জোরে ফেলে দেয়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে রায়হান বলেন, ‘আমার পাসপোর্ট আর জুতাজোড়া আব্বুর কাছে পৌঁছে দিয়েন।’
রায়হানের মৃত্যুর খবর শুনে মা শামীমা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। দাদী শামসুন্নাহার বিলাপ করে বলেন, ‘আমার শান্তশিষ্ট নাতিটা কেমনে হারাই গেলো।’ গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের ভিড় দেখা গেছে।
রায়হানের মামাতো ভাই রাজু জানান, ‘সোমবার রাত ১টায় মৃত্যুর খবর পাই। সফরসঙ্গীদের সাথে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে পারি। কেউ কেউ বলছেন, তাকে জাম্বিয়ার পাহাড়ে পুতে ফেলা হয়েছে। দালালরা ফোন ধরছে না। সরকারের কাছে বিচার দাবি করছি।’
রায়হানের জেঠা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে লাশ চাই আমরা। আমার ভাইয়ের স্ত্রী ছেলের শোকে পানি পর্যন্ত মুখে নিচ্ছেন না। সরকারের কাছে আকুল আবেদন, লাশ ফিরিয়ে দিন এবং দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন।’
কাটাছড়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলেয়া বেগম বলেন, ‘রায়হানের মৃত্যু অত্যন্ত মর্মান্তিক। পরিবারের হাল ধরতে প্রবাসে যাওয়ার পথে এমন মৃত্যু মেনে নেয়া কঠিন।’
পরিবারের পক্ষ থেকে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।