রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থীর ভিড়ে লালন মাজার এলাকা জনসমুদ্র

কুষ্টিয়ায় লালন মাজারে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবসে রেকর্ড সংখ্যক দর্শনার্থী উপস্থিত থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। এই তিন দিনের আয়োজনের মধ্যে আলোচনা, সংগীতানুষ্ঠান ও গোষ্ঠগানের মাধ্যমে লালনের জীবন ও চিন্তাধারা স্মরণ করা হয়েছে।

Location :

Kushtia
ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান
ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান |নয়া দিগন্ত

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি ও কুমারখালী সংবাদদাতা
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ছেউড়িয়স্থ লালন মাজারে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা ও মেলার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ রোববার থেকে সাধু-বাউলরা লালন মাজার ত্যাগ করে নিজ নিজ এলাকায় চলে যেতে থাকবেন।

এবার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শনার্থী লালন মাজার প্রাঙ্গনে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই লালন মাজার এলাকার কয়েক মাইলজুড়ে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।

শুক্রবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর থেকেই পুরো লালন মাজার-সংলগ্ন সকল সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। লালন মাজারের সকল সড়কে স্রোতের মতো মানুষ আসতে থাকেন।

এ পরিস্থিতির প্রভাব পড়ে শহরের সকল এলাকায়। শহরের হোটেল, রেস্ট হাউসগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ছিল। হোটেলে জায়গা না পেয়ে অনেককে মজমপুরগেট বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে হয়েছে।

হোটেল ও রেস্ট হাউসগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন দর্শনার্থীরা। আবার শুক্রবার রাতে শহরের বেশিভাগ হোটেলে খাবার শেষ হওয়ায় দর্শনার্থীদের নিদারুণ কষ্টে কাটাতে হয়েছে। অতিরিক্ত মানুষের চাপের সুযোগে রেস্টুরেন্ট ও হোটেলগুলোর খাবারের মূল্য বেশি নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

আনন্দ উল্লাসে উৎসবমুখর পরিবেশে ভক্তি ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে লালনকে স্মরণ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া শহর যে লালনের শহর তা এবারের তিরোধান দিবসের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবসের দ্বিতীয় দিন শনিবার সন্ধায় কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়াস্থ লালন মাজার-সংলগ্ন মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ সোহরাবউদ্দিন, জেলা বিএনপির আহবায়ক কুতুব উদ্দিন, সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, এনসিপি কুষ্টিয়ার প্রধান সমন্বয়ক জান্নাতুল ফেরদৌস টনি, গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: রাশেদুজ্জামান। প্রধান আলোচক ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষখ ড. মো: রশিদুজ্জামান।

আজ রোববার সন্ধায় লালন মঞ্চে তিন দিনের জাতীয় অনুষ্ঠানের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার, বিশেষ অতিথি থাকবেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল হক, বিজিবি কুষ্টিয়ার সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আহসান হাবিব, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। মুখ্য আলোচক থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: খালেদুজ্জামান।

এদিকে শনিবার ভোরে লালন মাজার-সংলগ্ন নবপ্রান আন্দোলন আখড়ায় লালনের তিরোধান দিবসে গোষ্ঠগানের আয়োজন ছিল। এসময় ভক্ত ও বাউলদের উপস্থিতিতে জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কবি, লেখক ও চিন্তক এবং লালন বিশেষজ্ঞ ফরহাদ মজহার। তিনি লালন সাইজীর জীনাদর্শ, কর্ম ও চিন্তা চেতনা নিয়ে আলোচনা করেন।