সিলেটের গোলাপগঞ্জের কদমগাছতলায় বন্ধুর ছুরিকাঘাতে বন্ধু নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতনামাসহ ছয়জনের নামে মামলা হয়েছে।
সোমবার (১১ আগস্ট) গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় এ হত্যা মামলা করেন নিহতের ভাই বাহার উদ্দিন।
নিহত জসিম আহমদ রনি গোলাপগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম আমুড়া ইউপির আমুড়া উত্তরপাড়া গ্রামের আজির উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে নিহত জসিম আহমদ রনি উপজেলা সদর সংলগ্ন কদমগাছতলা এলাকায় ভাড়াটিয়া বাসায় থাকতেন। নিহত রনি ১ ছেলে ও ১ মেয়েসহ ২ সন্তানের জনক ছিলেন।
জানা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জের কদমগাছতলা পয়েন্ট গভীররাতে ফেসবুকে পরকীয়া প্রেমের পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে বন্ধু রাজু আহমদের ছুরিকাঘাতে জসিম আহমদ রনি (৩০) নিহতের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা নম্বর ১২ দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই বাহার উদ্দিন বাদি হয়ে এজহার ভুক্ত দুইজন ও অজ্ঞাতনামা আরো চারজনসহ ছয়জনকে আসামি করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় এ হত্যা মামলা করেছেন। আসামিরা হলেন- একই উপজেলার রাজু আহমদ ও তানজিদা সুলতানা ইমা।
আরো জানা যায়, নিহত জসিম আহমদ রনি ও হত্যাকারী রাজু আহমদ দুই বন্ধু ছিলেন। তারা দুইজন প্রায়ই একসাথে চলাফেরা করতেন। নিহত জসিম আহমদ রনি পৌর যুবদলের কর্মী ছিলেন ও রাজু আহমদ পৌর ছাত্রদলের সাবেক সংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন বলে জানা যায়। হত্যাকারী রাজু আহমদ অন্যত্র পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ায় এনিয়ে দুইবন্ধুর মধ্যে সম্পর্কের ফাটল দেখা দেয়। এক পর্যায়ে জসিম আহমদ রনি রাজুর পরকীয়াকে কেন্দ্র করে ফেসবুকে একাধিক পোস্ট করেন। ঘাতক জসিমও ফেসবুকে রনিকে উদ্দেশ্য করে পোস্ট করেন। ফেসবুকের ওই পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে রোববার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাত অনুমান ১:৩০ মিনিটের সময় উপজেলা সদরের গোলাপগঞ্জ মডেল থানা সংলগ্ন উপজেলা খাদ্য গুদামের পাশে পৌর ছাত্রদল নেতা রাজু আহমদের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে বন্ধু জসিম আহমদ রনিকে আক্রমণ করে বুকে ও গলাসহ বিভিন্ন স্থানে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয়রা জসিম আহমদ রনিকে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খুনি রাজু আহমদ উপজেলার ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামের বাবুল আহমদের ছেলে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং হাসপাতালে গিয়ে লাশ ময়না তদন্ত শেষে নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। রোববার মাগরিবের নামাজের পর নিহতের নিজ এলাকায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এই হত্যার ঘটনায় নিহতের ভাই মো: বাহার উদ্দিন বাদি হয়ে একই উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের রাজু আহমদকে প্রধান আসামি করে ও তানজিদা সুলতানা ইমাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৩/৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা নম্বর-১২ দায়ের করেছেন। ঘটনার দুইদিন হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এ ব্যাপারে আমুড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রুহেল আহমদ এ প্রতিবেদককে জানান, এই হত্যায় যারা জড়িত রয়েছেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
আমুড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জামায়াত নেতা রাসেল আহমদ জানান, নিহত জসিম আহমদ রনি আমার এলাকার সন্তান। সে অত্যন্ত ভালো ছেলে। তাকে যারা খুন করেছে তাদের তড়িৎ আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান। অন্যথায় এলাকাবাসীকে নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।
এদিকে নিহত জসিম আহমদ রনির মা রত্না বেগম জানান, কয়েক দিন আগে ঘাতক রাজু আহমদ ও আমার ছেলে রনি একত্রে বাড়িতে এসে বেড়ায়ে গেছে। রনির মা জানান, রাজু আহমদ তার ছেলেকে খুন করেছে। তিনি এই হত্যার বিচার চান।
গোলাপগঞ্জে গভীর রাতে জসিম আহমদ রনিকে ছুরিকাঘাত করে খুন করার বিষয়টি ও থানায় মামলা করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোলাপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তদন্ত মোসলে উদ্দিন আহমেদ।