ভূমিকম্পে জাবির নতুন আবাসিক হলসহ আটটি হলে ফাটল

শিক্ষার্থীরা জানান, ভূমিকম্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল, রোকেয়া হল ও ফজিলতুন্নেসা ছাত্রী হলসহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল ও সুফিয়া কামাল হলে ফাটল দেখা গেছে। ছেলেদের কামালউদ্দিন হল ও ১০ নং ছাত্র হলের ভবনেও ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

আতাউর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Location :

Savar
জাবির কাজী নজরুল ইসলাম হলের নবম তলার ওয়াশরুমের দেয়ালে সৃষ্ট ফাটল
জাবির কাজী নজরুল ইসলাম হলের নবম তলার ওয়াশরুমের দেয়ালে সৃষ্ট ফাটল |নয়া দিগন্ত

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত শক্তিশালী ভূমিকম্পে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নবনির্মিত চারটি আবাসিক হলসহ মোট আটটি হলে ফাটল দেখা গেছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী।

শিক্ষার্থীরা জানান, ভূমিকম্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল, রোকেয়া হল ও ফজিলতুন্নেসা ছাত্রী হলসহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা হল ও সুফিয়া কামাল হলে ফাটল দেখা গেছে। ছেলেদের কামালউদ্দিন হল ও ১০ নং ছাত্র হলের ভবনেও ক্ষতির চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন ছয়টি আবাসিক হলের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। ছয়টি হলের মধ্যে চারটি হলেই ভূমিকম্পে ফাটল দেখা গেছে। এসব ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।

হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নজরুল হলের ৭ তলার সি-ব্লকের ফ্লোরে এবং ৬ তলার বি-ব্লকের ওয়াশরুমের দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। তাজউদ্দীন হলের ৯ তলার বি-ব্লকের ফ্লোরেও ফাটল ধরা পড়ে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের দ্বিতীয় তলার দেয়ালে, সুফিয়া কামাল হলের ফ্লোরে, রোকেয়া হলের ওয়াশরুমের দেয়ালে ও ফজিলতুন্নেসা হলের বিভিন্ন অংশেও ফাটল দেখা গেছে। এছাড়া কামালউদ্দিন হল ও ১০ নং ছাত্রহলের (সাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল) দুটি ভবনের সংযোগস্থল ভূমিকম্পে ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, আজকের ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাজউদ্দীন হল ও কাজী নজরুল হলের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা গেছে। আশ্চর্যের বিষয়, বহু বছর আগে নির্মিত পুরনো হলগুলোতে বড় ধরনের কোনো ফাটল নেই, অথচ নতুন হলগুলোর করিডরসহ বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা গেছে। এটি স্পষ্ট করে যে পূর্ববর্তী প্রশাসনের নির্মাণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছিল। নির্মাণের পাঁচ বছর না যেতেই ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হলগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সিফাতউল্লাহ বলেন, নতুন হলগুলো নির্মাণের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। বৃষ্টি হলেই রুমে পানি ঢুকে যায়, ঝড় হলে টাইলস খুলে পড়ে। আজ আবার ভূমিকম্পে ফাটল ধরেছে। পুরোনো হলে এমন সমস্যা না থাকলেও নতুন হলে ফাটল ধরেছে। আমরা ধারণা করছি, নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলেই এমন হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দেবো।

অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নাসিরুদ্দিন বলেন, ভূমিকম্প ফ্যাক্টরের মাত্রা বিবেচনায় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন হলে যে ফাটল ধরেছে, সেগুলো আমাদের নজরে এসেছে। এগুলো নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এমন দুর্যোগ হলে এমন ফাটল ধরতে পারে। তবে যদি কলাম বা বিমে ফাটল ধরত, তাহলে সমস্যা হতো। এখানে তেমন কিছু ঘটেনি।

ভিসি অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, আমাদের নতুন হলগুলো বিগত প্রশাসনের সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভবনগুলো নির্মাণে যে দুর্নীতি অনিয়ম হয়েছে সেটি দৃশ্যমান। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করছে। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রকৌশল বিভাগকে জরুরি তদারকির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞ দলকে ফাটলের প্রকৃতি পরীক্ষা করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।