কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আইএফআইসি ব্যাংকে কর্মরত অবস্থায় রহস্যজনকভাবে ছয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী অজ্ঞান হওয়ার ঘটনায় ব্যাংক ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে কোনো কিছুই মেলেনি এমন তথ্য দিয়েছে পুলিশ। তবে ব্যাংকের ভিতর পাওয়া গেছে ‘বিষাক্ত রাসায়নিকের গন্ধ’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ধারণা করছে ব্যাংকের ভেতর চালানো জেনারেটর থেকে গ্যাসের উৎপত্তি হয়ে এমনটা হতে পারে। সকল প্রকার আলামত জব্দ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংকের ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে অচেতন হয়ে পড়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ইস্যুটি নিয়ে বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। ব্যাংক লুটের ভাবনা থেকে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কর্মরত ব্যক্তিদের অচেতন করে থাকতে পারে এমন ধারণা ছিলো প্রথমে। সিআইডি এবং পুলিশ ব্যাংক ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণ করে দেখতে পায় ব্যাংক লুটের কোন চেষ্টা কেউ করেনি। এমনকি কেউ অচেতন নাশকও ব্যবহার করেনি। তবে সকলেরই ধারণা ব্যাংকের দরজা জানালা লাগিয়ে জেনারেটর চালানোর ফলে জেনারেটরের ধোঁয়া বিষাক্ত হয়ে এমনটি হতে পারে।
আলামত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে আসল তথ্য জানা যাবে বলে জানিয়েছেন কুলিয়ারচর থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন পিপিএম।
উল্লেখ্য, রোববার (১ জুন) দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে কুলিয়ারচর বাজারস্থ হাবিব কমপ্লেক্সর দ্বিতীয় তলায় আইএফআইসি পিএলসি ব্যাংকে রহস্যজনকভাবে ব্যাংক ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান, কর্মকর্তা সিয়াম রহমান, হোসনা বেগম, সৌমিক জামান খান, মেরিন আক্তার ও সিকিউরিটি গার্ড কামাল মিয়া জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছয়জনের মধ্যে শাখা ব্যবস্থাপক সৌমিক জামান খান ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেনকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করেন। অন্যদের উদ্ধার করে নেওয়া হয় জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। পরে ব্যবস্থাপক ও নিরাপত্তাকর্মীকেও পাঠানো হয় জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
এ খবর পেয়ে ওইদিন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবিহা ফাতেমাতুজ্-জোহরা, ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আদনান আখতার ও কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: হেলাল উদ্দিন পিপিএম সহ ভৈরব র্যাব ক্যাম্পের সদস্যরা, বাজিতপুর সেনা ক্যাম্পের সদস্যরা ও ময়মনসিংহের সিআইডি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের নেতৃত্ব দেন ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নাজমুস সাকিব।
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের ভল্ট ও ক্যাশবাক্স ঠিক পাওয়া গেছে। তবে ব্যাংকের ভেতরে বিষাক্ত রাসায়নিকের গন্ধ ছড়িয়ে ছিল। গন্ধ খুবই তিক্ত। প্রাথমিক তদন্ত শেষে মনে হচ্ছে বিষাক্ত কোনো গ্যাসের গন্ধ থেকে অসুস্থতার কারণ হতে পারে। চিকিৎসকেরাও এমনটাই মনে করছেন।’
কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা ফাতেমাতুজ জোহরা অসুস্থ ব্যাংক কর্মকর্তা–কর্মচারীদের খোঁজ রাখছেন।
তিনি বলেন, ‘যতটুকু জানতে পেরেছি প্রথমে বমি করতে করতে সবাই চেতনা হারিয়ে ফেলেন। পরে তাদের অক্সিজেন লেবেল কমতে শুরু করে। দ্রুত অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। বর্তমানে সকলেই অনেকটা সুস্থ হয়ে গেছে। তবে কেন এমনটা হলো তারা কেউ বলতে পারছে না।’