ফেনীতে জামায়াত নেতা এটিএম আজহার

সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনে অসুবিধা কোথায়

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ডাল মে কুচ কালা হায়। ক্ষমতায় গিয়ে জুলাই সনদ ছুঁড়ে ফেলে পুরোনো শাসনের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বেঁচে থাকতে এটি হতে দেব না।

শাহাদাত হোসাইন, ফেনী অফিস

Location :

Feni
ফেনীতে পথসভায় এটিএম আজহারসহ জামায়াত নেতারা
ফেনীতে পথসভায় এটিএম আজহারসহ জামায়াত নেতারা |নয়া দিগন্ত

জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনে অসুবিধা কোথায়।

বুধবার বিকালে শহরের ট্রাংক রোডের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জেলা জামায়াতের আয়োজনে পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ডাল মে কুচ কালা হায়। ক্ষমতায় গিয়ে জুলাই সনদ ছুঁড়ে ফেলে পুরোনো শাসনের দিকে ফিরিয়ে নেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বেঁচে থাকতে এটি হতে দেব না। জামায়াতে ইসলামীর জন্য নির্বাচন পেছাবে না। যারা জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি, নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনে বাঁধা দিচ্ছেন তাদের কারণে নির্বাচন পেছাতে পারে। ৫৪ বছর মানুষের তৈরি আইনে দেশ চলেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে বসে দেশে রাজনীতি করা যায় না। দেশের জনগণের সাথে মিশতে হবে। যারা বিদেশে থেকে কলকাঠি নাড়ার চেষ্টা করছেন, সোয়া এক বছর হয়ে গেলো আপনাদেরকে বাংলাদেশে পাই না। জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতে হবে। আগামী নির্বাচনে মানুষের তৈরি আইন নাকি আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসনের ফয়সালা হবে। আল্লাহর আইন চাইলে ইসলামী দলগুলোকে ভোট দিতে হবে। নির্বাচনের সময় অন্য দলের লোকেরা টুপি, পায়জামা-পাঞ্জাবি পড়বে। হাতে তাসবিহ-জায়নামাজ থাকবে। তাদের দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। সেই ব্যক্তি যতই ব্যক্তিগতভাবে নামাজি হোক না কেন তিনি দলের বিরুদ্ধে সংসদে কথা বলতে পারবেন না। তার দল চায় মানুষের তৈরি আইন। চাইলেই ইসলামী আইন তৈরি করতে পারবে না। পোশাক দেখে ভোট দেবেন না। দল ও দলের লোকদের দেখে ভোট দিলে সংসদে গিয়ে সংবিধান অনুযায়ী আল্লাহর আইন চালু করলে সবাই সওয়াবের ভাগিদার হবেন। তাহলে হিন্দু-মুসলমান সবাই সমান অধিকার পাবেন।’

নির্বাচনের দিন ব্যালট ছিনতাই করতে এলে দুই হাত দিয়ে তাদের রুখে দেয়ার আহবান জানান তিনি।

এটিএম আজহার বলেন, ‘আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন মানে ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, সামগ্রিক পরিবর্তন। আমরা আর পেছনের দিকে ফিরে যেতে চাই না। দামাল ছেলেরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে জীবন দিয়ে নতুনভাবে স্বাধীনতা এনেছেন। স্বৈরশাসক কায়েম হবে, দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হবে সেইদিকে দেশকে নিয়ে যেতে দেয়া হবে না‘

এটিএম আজহার বলেন, ‘দেশের জনগণ দেশ শাসন করবে। কারো দাদাগিরিতে দেশ চলবে না। কারো দাদাগিরি পছন্দ করি না। আমরা সমমর্যাদার ভিত্তিতে পরস্পর সম্পর্ক রাখতে চাই। সমস্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সংবিধান আপনারা পাঠিয়ে দেবেন এজন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হয়েছে দিল্লির কাছে নতি স্বীকার করার জন্য নয়। আমরা স্বাধীন থাকতে চাই। ভারত আমাদের ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে উত্তরবঙ্গের ৮ কোটি মানুষকে সর্বশান্ত করছে। টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে আমাদের শুকিয়ে মারছে। গত ৫৪ বছরে ভারত বন্ধুত্বের পরিচয় দেয়নি। যারা স্বাধীনতবিরোধী বলতেন, তারা বাংলাদেশে আছেন, যারা স্বাধীনতার পক্ষে বলেন তারা ভারতের কাছেই আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা পালায়নি, পালানোতে বিশ্বাস করি না। যিনি বলতেন শেখের বেটি পালায় না, তিনি জেলখানার ভয়ে দিল্লীর কোলে পালিয়েছেন। বড় বড় কথা বলা যায়। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের নেতারা বিদেশে পালিয়ে যাননি।"

জনগণের রায় পেলে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে দেশ চলবে বলেও উল্লেখ করে বর্ষিয়ান এ রাজনীতিবিদ।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘১৩ তারিখে নাকি তার বিচারের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এজন্য লোক লাগিয়ে পুরোনো কায়দায় গাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগাচ্ছে। গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দিয়ে আপনি রেহাই পাবেন না। এই দেশের জনগণ আপনাকে আর চায় না। সাহস থাকলে বাংলাদেশে আসুন, মামলা ফেস করুন। আমাদের নেতা মীর কাসেম আলী আমেরিকায় ছিলেন। তাকে বলা হয়েছিল বাংলাদেশে এলে গ্রেফতার করবে, ফাঁসি দিয়ে দিবে। তিনি বলেছিলেন- ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনায় হাজার হাজার লোকের চাকরি দিয়েছি। এটাই কী আমার অপরাধ। এই অপরাধে মরতে হলে আমেরিকায় কেন মরবো, বাংলাদেশে মরবো। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি, বাংলাদেশেই যাবো। তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ফাঁসি দেয়া হয়েছে। তিনি ফাঁসিকে ভয় পাননি। জামায়াত নেতারা জনগণকে ফেলে রেখে বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে চান না। জামায়াতের নেতারা জনগণের জন্য, ইসলামের জন্য কাজ করেন। আল্লাহকে ছাড়া কাউকে ভয় পাই না আমরা। এজন্য আমরা দেশে আছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে জনতার সামনে আসতে পেরেছি। শাহাদাতের মর্যাদা না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের রায় বহালের পর যা কিছু ছিলো পরিবারকে দিয়ে দিয়েছি। ২০২৪ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা স্বৈরাচারকে দেশ থেকে বিতাড়িত করার পর মুক্ত হয়েছি। আমার এবং আমার নেতাদের কী অপরাধ ছিল। আমাদের অপরাধ মানুষের পক্ষে কথা বলতাম, মুসলিম হিসেবে আল্লাহকে বিশ্বাস করতাম, কুরআনের আইনের কথা বলতাম।’

জেলা আমির মুফতি আবদুল হান্নানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী-২ আসনে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, ফেনী-৩ আসনে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী ডা. মে: ফখরুদ্দিন মানিক, ফেনী-১ আসনে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী অ্যাডভোকেট এসএম কামাল উদ্দিন।

অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশকে কল্যানকর মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই। অতীতে দু-দুইবার প্রধানমন্ত্রী পেয়েও সমস্যা সমাধান হয়নি। নেতারা সৎ, মানবদরদি হলে সমাধান সম্ভব। আগামীতে দায়িত্ব পেলে সমাধান করা হবে।’

ডা. মে: ফখরুদ্দিন মানিক বলেন, ‘মিথ্যা মামলা দিয়ে এটিএম আজহারকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তার রায়ের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের ট্রাইব্যুনাল মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। হত্যা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আদর্শকে মোছা যায় না। অনেকে ফ্যাসিবাদের পথে হাঁটছেন, তাদের বলবো জনগণর মনের ভাষা বুঝুন। অন্যথায় পরিণতি ফ্যাসিবাদের চেয়েও ভয়াবহ হবে।’

জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহীমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন শহর আমির ইঞ্জিনিয়ার নজরুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি ওমর ফারুক, শ্রমিক কল্যান ফেডারেশনের জেলা সভাপতি ফারুক আহমাদ আজাদ, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা নাদেরুজ্জামান। সভায় কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য মাওলানা আলাউদ্দিন, সাবেক ফেনী জেলা আমির একেএম শামসুদ্দিন, বর্তমান নায়েবে আমির অধ্যাপক আবু ইউসুফ ও মাওলানা মাহমুদুল হক, ছাত্রশিবিরের শহর সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম সহ জামায়াত-শিবিরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে তিনি দাগনভূঞা উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ওমরাবাদ গ্রামে জামায়াতের সাবেক আমির প্রয়াত মকবুল আহমাদের কবর জিয়ারত করেন। সেখানে নাদের আমিন বাড়ি প্রাঙ্গণে মকবুল আহমাদ ও তার ভাইদের দান করা ৯০শতাংশ জায়গায় আঞ্জবের নেছা এডুকেশনাল ট্রাস্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। একইদিন দাগনভূঞা পৌর শহরে পথসভায় বক্তব্য রাখেন।