সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর নেতারা।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের তৃতীয় তলায় সিন্যামন রেস্টুরেন্টে এ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ।
এ মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতে ইসলামী আমির ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বার বলেন, ‘আমরা ২০২৪-এর ৫ আগস্টের আগে এভাবে বসতে পারিনি, কিন্তু ৫ আগস্টের পর প্রেসক্লাবে এসেছি, সাংবাদিকদের সাথে খোলামেলা আলোচনাও করেছিলাম। আমরা বলেছি যে ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়েছে, কোনো না কোনো ভাবে সাংবাদিকরা বৈষম্যের শিকার হয়েছে। তারা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার সুযোগ পায়নি। সেই লক্ষ্যে এখন সময় এসেছে নতুনভাবে কাজ করার।’
তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর জাতি আশা করেছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার কর্তৃক লুটপাটকৃত ভঙ্গুর অর্থনীতিতে চাঙ্গা ভাব ফিরিয়ে আনা হবে, ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থ ব্যাবহার করে ধ্বংস করে যাওয়া রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অরগানগুলো দ্রুত সংস্কার করে দেশকে এক মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হবে। সহস্রাধিক শিশু-তরুণ ও যুবকের রক্তের ওপর গড়ে উঠা দ্বিতীয় সত্যিকারভাবেই মানুষের ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার একটা বাস্তব নমুনা হিসেবে গড়ে উঠবে। ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা ছিল জুলাই গণহত্যাকারীদের অবিলম্বে বিচারের ব্যবস্থা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতোই ফ্যাসিস্টের দোসরদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে পুনরায় ফ্যাসিজম ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করা হবে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই জাতি হতাশ হলো। জাতির সামনে ফ্যাসিজমের প্রেতাত্মা যেন নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ পেতে থাকল। চাঁদবাজি, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড আবার ভয়ানক আকারে সমাজে ছড়িয়ে পড়ল। যখন প্রয়োজন ছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাওয়া তখন পুনরায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বস্তাপচা বয়ান যা জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি প্রত্যাখান করেছিল সেই ‘রাজাকার-স্বাধীনতাবিরোধী’ ইত্যাদি বয়ান চালু করা হলো। ট্যাগের রাজনীতি চালু করার মাধ্যমে জাতিকে আবার দ্বিধা-বিভক্ত করার প্রয়াস চালানো হলো। এই ট্যাগের রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।’
‘দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় থেকেই নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের মাধ্যমে যেন কোনো দল আবার স্বৈরাচার হয়ে উঠতে না পারে, ফ্যাসিজম কায়েম করতে না পারে সেজন্য জামায়াতে ইসলামী আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত ও পরিক্ষিত পিআর পদ্ধতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়ে আসছে। সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনমতের প্রতিফলন যেন ঘটে এজন্য নির্বাচনের আগেই লেভেল-প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ছাত্র-জনতার প্রাণের দাবি জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াত সমমনা ইসলামী দলগুলোকে সাথে নিয়ে ময়দানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আজকের এ মতবিনিময় সভা থেকে দেশকে ইনসাফের ভিত্তিতে বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ জামায়াতের পাঁচ দফা গণদাবি মেনে নিয়ে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে পাঁচ দফা দাবি আদায়ের এ আন্দোলনে এগিয়ে আসার জন্য জাতির বিবেক সাংবাদিক ভাইদের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মুমিনুল হক সরকার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. ইকবাল হোসাইন ভূইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল কাইয়ুম, মহানগরী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মো: জামাল হোসাইন, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য, প্রচার-মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি হাফেজ আব্দুল মোমিন, মহানগরী ও থানার বিভিন্ন নেতারা।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু সউদ আল মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীরা।
উল্লেখ্য, পিআর পদ্ধতিসহ জামায়াত কর্তৃক ঘোষিত পাঁচ দফা কর্মসূচি ও জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন মাওলানা আবদুল জব্বার।