ঢাকা থেকে হবিগঞ্জে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে চলন্ত বাসে এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি ঢাকার একটি গার্মেন্টসেও চাকরি করেন।
রোববার (১৫ জুন) দিবাগত রাতে নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে চলন্ত বাসে ওই কলেজছাত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়।
ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে স্থানীয় জনতা সড়কের তিনতালাব পুকুর পাড় নামক স্থানে বাসটিকে আটক করে। এ সময় অভিযুক্ত বাসের ড্রাইভার সাব্বিরকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে অভিযুক্ত অপরজন বাসের হেলপার পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ভিকটিম কলেজছাত্রী ও অভিযুক্ত ড্রাইভারকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় সোমবার (১৬ জুন) দুপুর ১২টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার এ এন এম সাজেদুর রহমান। এ সময় পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যায় বিচারের স্বার্থে অপরাধীদের কোনো ছাড় নেই। পলাতক আসামিকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
এ ঘটনায় এলাকায় চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পুলিশ জানায়, ওই কিশোরী হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বাসিন্দা ও ঢাকার ফার্মগেটের একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। পাশাপাশি তিনি একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তিনি ঢাকার ফার্মগেট থেকে ‘বিলাশ পরিবহন’ নামের একটি বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। তার শায়েস্তাগঞ্জে নামার কথা থাকলেও ঘুমিয়ে পড়ায় বাসটি সিলেট পর্যন্ত চলে যায়।
সিলেটে পৌঁছার পর ঘুম ভাঙলে ওই কলেজছাত্রী নবীগঞ্জ হয়ে বানিয়াচং যাওয়ার উদ্দেশে সিলেট-নবীগঞ্জ রুটে চলাচলকারী ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি বাসে ওঠেন।
বাসটি বিভিন্ন স্টপেজ থেকে যাত্রী উঠানো-নামানোর সময় ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে পড়ে। শেরপুর এলাকায় পৌঁছার পর অন্য যাত্রীরা নেমে গেলে বাসে ওই কলেজছাত্রী একা হয়ে পড়েন। এরপর চলন্ত অবস্থায় বাসের হেলপার লিটন মিয়া এবং পরে চালক শাহ সাব্বির মিয়া পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করেন।
পুলিশ আরো জানায়, বাসটি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি এলাকায় পৌঁছালে কিশোরী জোরে চিৎকার শুরু করেন। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দ্রুত সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি দল ছালামতপুর এলাকায় অবস্থান নেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বাসের গতিরোধ করে বাসচালক শাহ্ সাব্বির মিয়াকে আটক এবং ভুক্তভোগী কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযুক্ত হেলপার লিটন মিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বাস থেকে পালিয়ে যায় এবং এখনো পলাতক রয়েছে।
এ বিষয়ে ভিকটিম কলেজছাত্রী জানান, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে তিনি ঢাকায় ঈদ করেছেন। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ি আসেন নাই এজন্য রোববার গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং থানার সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমরা ভিকটিম কলেজছাত্রী ও বাসচালককে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছি।’
নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো: কামরুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার সাথে জড়িত বাসচালক মো: সাব্বিরকে আটক করা হয়েছে। পলাতক হেলপার লিটনকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় ধর্ষণ মামলা রুজু করা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং দোষীদের শিগগির বিচার নিশ্চিত করা হবে।’