গাজীপুরের শ্রীপুরে নিখোঁজের তিন দিন পর শিশু আনাছ খানের (৪) লাশ বাড়ির পাশের বিল থেকে উদ্ধার করেছে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ ঘটনায় প্রতিবেশী নজরুল ইসলাম (৫০) ও তার স্ত্রী শাহীনুর বেগমকে আটক করা হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শ্রীপুরের রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়া (নতুন বাজার) এলাকার বাঙ্গালপাড়া বিল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসমত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
শিশু আনাছ খান শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়া গ্রামের সৌদি প্রবাসী আল আমিন খানের দ্বিতীয় ছেলে। সে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে শিশু শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো।
শিশু আনাছের দাদা হাছেন আলী খান জানান, ‘শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে খেলনা সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয় আনাছ। সে নজরুলের বাড়িতে সাইকেল নিয়ে খেলাধুলা করে। সকাল ৯টার দিকে আনাছ বাড়ি ফিরে না আসায় সকলেই তার খোঁজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তার ব্যবহৃত সাইকেল প্রতিবেশী সাজুর বাড়িতে পাওয়া যায়। সাজুকে আনাছের কথা জিজ্ঞাসা করলে জানায়, পাশের বাড়ির নজরুলের স্ত্রী শাহীনুর বেগম তার বাড়িতে আনাছের সাইকেল রেখে গেছে।’
নাতি আনাছ নিখোঁজের ঘটনায় ওইদিন রাতেই শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন হাছেন আলী।
শিশু আনাসের ফুফা মনির হোসেন জানান, ‘আটক নজরুল ও তার স্ত্রী পাশের খোরশেদের বাড়ি দেখাশোনার জন্য ওই বাড়িতেই বসবাস করতেন। নজরুলের স্ত্রী শাহীনুর বেগম আনাছদের বাড়িতে টুকিটাকি কাজ (থালাবাসন ধোয়া, রান্না, কাপড় ধোয়া) করতো। আনাস প্রায়ই সাইকেল নিয়ে নজরুলের চার বছরের ছেলে আব্দুল্লাহর সাথে তার বাড়িতে গিয়ে খেলাধুলা করতো। এলাকার কারো সাথে আনাছের বাবা-মার কোনো বিরোধ ছিল না। কী কারণে এবং কেন তারা আমার ভাতিজা আনাছকে হত্যা করলো আমরা বলতে পারছি না।’
গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসমত আলী বলেন, ‘শিশু আনাছ নিখোঁজের ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে শ্রীপুর থানা ও গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে সন্দেহ হলে নজরুল দম্পতিকে চিহ্নিত করে রোববার (৯ নভেম্বর) রাত ১০টার দিকে তাদের আটক করা হয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করলে সকালে আনাছ নিখোঁজের সাথে তাদের জড়িত থাকার ঘটনা স্বীকার করেন। লাশের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে শিশুর লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে বাঙ্গালপাড়া বিলের মাঝে ফেলে রাখে। পরে শাহীনুর বেগমের দেয়া তথ্যমতে বিলের মাঝ থেকে শিশু আনাছের লাশ উদ্ধার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।’
তবে কী কারণে ওই দম্পতি শিশুকে হত্যা করেছে এ বিষয়ে পুলিশ কিছু বলতে পারেনি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল বারিক জানান, ‘শিশুর মাথায় কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।’



