কুষ্টিয়ায় মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হবে ফরিদা পারভীনকে

‘লালনকন্যা’ খ্যাত বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে কুষ্টিয়ায় মা-বাবার কবরের পাশে দাফন হবেন। তার মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে গভীর শোক নেমে এসেছে।

আ ফ ম নুরুল কাদের, কুষ্টিয়া

Location :

Kushtia
ফরিদা পারভীন
ফরিদা পারভীন |নয়া দিগন্ত

বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ‘লালনকন্যা’ খ্যাত ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে কুষ্টিয়ার সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। লালন সংগীতের মাধ্যমে দেশের মানচিত্র ছাঁড়িয়ে বিশ্বে কুষ্টিয়াকে সম্মানিত করা ফরিদা পারভিনের দাফন করা হবে কুষ্টিয়ায় মা-বাবার কবরে পাশে।

রোববার দুপুরে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানাজা শেষে ফরিদা পারভিনের লাশ কুষ্টিয়ায় নেয়া হবে। সেখানে মাগরিবের নামাজের পর কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।

সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা পারভীনের পারিবারিক সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

শিল্পী ফরিদা পারভিনের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। গীতিকার, সুরকার ও বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ মরহুম অধ্যাপক আবু জাফরের স্ত্রী ছিলেন তিনি। অধ্যাপক আবু জাফরের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি এক বাঁশিওয়ালাকে বিয়ে করেন। শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসা ও মৃত্যুর সময় পর্যন্ত সন্তানরা তার দেখভাল করেছেন।

কুষ্টিয়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ লালিম হক নয়া দিগন্তকে বলেন, ফরিদা পারভিনের এক দিনে জম্ম হয়নি। তার একাগ্রতা, মেধা আর মননের মাধ্যমে লালনের গান গেয়ে দেশের মানুষকে বিমোহিত করেছিলেন। ফরিদা পারভিন কুষ্টিয়া মীর মশাররফর হোসেন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কুষ্টিয়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে এইচএসসি ও পরবর্তীতে একই কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স নিয়ে লেখা পাড় শেষ করেন।

অ্যাডভোকেট লালিম হক জানান, ফরিদা পারভিনের বাবার বাড়ি নাটোর জেলায় হলেও তার বাবা চাকরি করতেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। সেই সুবাদে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে তাদের নিজস্ব আবাসস্থান ছিল। ফরিদা পারভিন কলেজ-জীবনে সর্বপ্রথম দোল পুর্ণিমায় লালন মাজারে ‘সত্য বল সুপথে চল, ওরে আমার মন’ এই গান গেয়ে পুরো মঞ্চ মাতিয়ে তোলেন। এখন অবধি লালনের এই গানটি সর্বস্তরে ব্যাপক সমাদিত ও প্রশংসিত।

তিনি আরো জানান, ফরিদা পারভিন মকসেদ সাঁইজির হাতে খড়ি ছিলেন। তিনি খোদা বক্স সাঁই, করিম সাঁই, ব্রজেন দাসের মতো গুনী শিল্পীদের সান্নিধ্যে লালন গানের তালিম নিয়েছিলেন। তার স্বামী সুরকার ও গীতিকার মরহুম অধ্যাপক আবু জাফরের লেখা ‘এই পদ্মা, এই মেঘনা, সুরমা নদী বয়ে’-সহ বিপুল গানের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন তিনি।

ফরিদা পারভিনকে শেষবারের মতো দেখতে হাজার হাজার শ্রোতা ও ভক্তরা কুষ্টিয়ায় অপেক্ষা করছেন। কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মা-বাবার কবরস্থানেই তাকে দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে।

কুষ্টিয়া শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমরিুল ইসলাম বলেন, ‘ফরিদা আপা জেলার সাংস্কৃতি অঙ্গনের মধ্যেমনি ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়াবাসীকে ভালোবেসে তার সংগীত অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তার অভাব কোনোদিনই পূরণের নয়।’