কাপাসিয়ায় ছাত্র-যুব সমাবেশে শিবির সভাপতি

আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ

‘আমরা চাই হিংসা ও কাদা-ছোড়াছুড়ির রাজনীতি বন্ধ হোক। রাজনীতিতে উদারতা ও সহনশীলতা থাকুক। জাতির সঙ্কট মুহূর্তে যুবসমাজের দায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং সততা, ন্যায় ও আদর্শের পথে ঐক্যবদ্ধ তরুণ শক্তিই জাতিকে সঠিক দিশা দেখাতে পারে।’

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর

Location :

Kapasia
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ছাত্র-যুব সমাবেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ছাত্র-যুব সমাবেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা |নয়া দিগন্ত

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে তরুণদের স্বপ্নের বাংলাদেশ, যেখানে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিকেরা নেতৃত্ব দিবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই হিংসা ও কাদা-ছোড়াছুড়ির রাজনীতি বন্ধ হোক। রাজনীতিতে উদারতা ও সহনশীলতা থাকুক। জাতির সঙ্কট মুহূর্তে যুবসমাজের দায়িত্ব বৃদ্ধি পায় এবং সততা, ন্যায় ও আদর্শের পথে ঐক্যবদ্ধ তরুণ শক্তিই জাতিকে সঠিক দিশা দেখাতে পারে।’

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) গাজীপুরে কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ছাত্র-যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, “চাঁদাবাজের কথা বললে মানুষ একটি দলকেই নির্দেশ করে। যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের কাছে রাষ্ট্রের সম্পদ কতটুকু নিরাপদ? একটি রাজনৈতিক দল শ্লোগান দেয়, ‘একটা একট শিবির ধর, সকাল-বিকেল নাস্তা কর।’ এরকম সহিংস শ্লোগান একটি রাজনৈতিক দল কিভাবে দিতে পারে? তাদের কাছে মানুষ নিরাপদ থাকবে কি করে?’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। যারা অতীতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের অগ্রযাত্রা থামাতে চেয়েছিল, তারাই পিছিয়ে গেছে। আমাদেরকে নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা দলগুলো আজ হেলিকপ্টারযোগে ভারত পালিয়ে গেছে। আমাদের প্রজন্ম কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি, কোনো রক্তচক্ষু বা আধিপত্যবাদের কাছে মাথা নত করে না। আমরা একমাত্র আল্লাহর কাছে মাথা নত করি।’

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মো: সালাহউদ্দিন আইউবী বলেন, ‘আমাদের কাপাসিয়ায় কোনো উন্নয়ন নেই, স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানও ভালো না। যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের কাপাসিয়ায় মাদকের অভাব নেই। মাদক আমাদের সমাজকে গ্রাস করেছে। মাদকমুক্ত কাপাসিয়া গড়াই হবে আমাদের প্রথম কাজ।’

তিনি বলেন, ‘কর্মসংস্থানের সঙ্কট দূর করতে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন গড়ে তোলা হবে। যুবকদের শক্তি সৎ নেতৃত্বের পেছনে কাজে লাগালে কাপাসিয়া দেশব্যাপী উন্নয়নের অনন্য মডেল হয়ে উঠবে।’

কাপাসিয়ার স্বাস্থ্যসেবা সঙ্কট, কর্মসংস্থান ঘাটতি, মাদক, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিস্তারসহ নানা বাস্তব চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত দুই দশকে আমি ৬৬টি টিউবওয়েল, ৩১টি গভীর নলকূপ, ৫১ পরিবারে টিন, ২২টি আধুনিক ওযুখানা ও শৌচাগার, শতাধিক মসজিদে সহযোগিতা, খাদ্য ও পোশাক সহায়তা এবং শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছি। এছাড়া মাদক ও অপরাধ দমনে মানববন্ধন, স্মারকলিপি ও গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি।’

আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ তাকে দায়িত্ব দিলে তিনি ১৭ দফা উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেন। যার মধ্যে রয়েছে— কাপাসিয়া পৌরসভা গঠন, জিরো ক্রাইম কমিউনিটি, আধুনিক ২০০ শয্যার হাসপাতাল, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শিল্প উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ, বিদেশগামীদের ভাষা শিক্ষা, ক্যারিয়ার হাব, কৃষি আধুনিকায়ন, পর্যটন কেন্দ্র, মিনি স্টেডিয়াম, স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি, শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রধান সড়ক ও রাস্তা সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, সোলার ও ইন্টারনেট সম্প্রসারণ এবং নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস ও মহিলা মার্কেট।

কাপাসিয়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ফরহাদ মোল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গাজীপুর জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা সেফাউল হক, ইসলামী আন্দোলন কাপাসিয়া উপজেলার নেতা মাওলানা কাজিম উদ্দিন, নরসিংদী জেলা জামাতের আমির মাওলানা সানাউল্লাহ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর জিএস জনাব এস এম ফরহাদ, গাজীপুর মহানগর ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি রেজাউল ইসলাম, গাজীপুর জেলা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, অ্যাডভোকেট সাদেকুজ্জামান এবং স্থানীয় অন্য নেতাকর্মীরা।

ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘৫২ থেকে ২৪ এদেশের সুশাসন, গণতন্ত্র বার বার হোঁচট খেয়েছে। এতোবার রক্ত দিয়েও ভুল নেতৃত্ব নির্বাচনের কারণে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে। ভুল মানুষকে ভোট দিলে তার দায় জনগণের ওপর বর্তায়। তাই বিবেকের ভোট দিন এবং অন্যায়, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে দৃঢ় থাকুন।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজপথ সব জায়গায় আমরা দুর্নীতি ও অন্যায়কে লাল কার্ড দেখিয়েছি, যুবসমাজকেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে।’

অনুষ্ঠান শেষে আয়োজক সংস্থা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাপাসিয়া উপজেলা শাখা ঘোষণা করে মাদকমুক্ত কাপাসিয়া, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, যুববান্ধব সমাজ গঠন এবং সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনে জনগণকে সচেতন করা তাদের মূল লক্ষ্য।

উপস্থিত হাজারো তরুণ যুবকের উদ্দীপনায় সমাবেশটি কাপাসিয়ার পরিবর্তন, উন্নয়ন এবং নৈতিক নেতৃত্বের নতুন প্রত্যাশা ছড়িয়েছে।