পিরোজপুরে সদ্য বহিষ্কৃত জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মারুফ চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতার ‎

শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে পুলিশের যৌথ অভিযানে পিরোজপুর শহরের মারুফের মালিকানাধীন আবাসিক বিলাস হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

পিরোজপুর প্রতিনিধি

Location :

Pirojpur
মারুফ হাসানকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী
মারুফ হাসানকে গ্রেফতার করে যৌথ বাহিনী |নয়া দিগন্ত

চাঁদাবাজি মামলায় পিরোজপুর জেলা যুবদলের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক মারুফ হাসান ওরফে মারুফ পোদ্দারকে (৪৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে পুলিশের যৌথ অভিযানে পিরোজপুর শহরের মারুফের মালিকানাধীন আবাসিক বিলাস হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

চাঁদাবাজির অভিযোগে জুয়েল শেখ নামে এক বালু ব্যবসায়ী মারুফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পিরোজপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন।

মারুফকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রবিউল ইসলাম।

‎মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মারুফ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। এ ঘটনায় মারুফকে তার পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এতেও দমে না গিয়ে তিনি নিয়মিত চাঁদাবাজি করতে থাকেন।

‎মারুফ কিছুদিন ধরে জুয়েল ও তার ব্যবসায়িক সহযোগী রিপনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এছাড়া প্রতি মাসে নিয়মিত তাদের কাছে আরো এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তিনি। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাদেরকে মারধর ও খুন-জখমের হুমকি দেন তিনি। তারা বিষয়টি বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় লোকজনদের জানালে মারুফ তাদের প্রতি আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।

‎শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে মারুফের নেতৃত্বে মিরন ও মিলন নামের দুই যুবকসহ অজ্ঞাতানামা আরো দুই-তিনজন হাতে চাইনিজ কুড়াল, দাও, লাঠি, হকিস্টিক, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্রসহ বলেশ্বর ব্রিজ সংলগ্ন জুয়েলের মালিকানাধীন মেসার্স রুমু এন্টারপ্রাইজ অফিসের সামনে তাদের দু’জনের কাছে পূর্বের দাবিকৃত পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ‎মারুফ হকিস্টিক দিয়ে জুয়েলকে এলোপাতাড়িভাবে পিটানো শুরু করেন। এ সময় তার ব্যবসায়িক সহযোগী রিপন তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে মারুফ, মিরন ও মিলনসহ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাদেরকে এলোপাতাড়িভাবে কিল-ঘুষি মারেন এবং লাঠি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। নিজেকে রক্ষার জন্য জুয়েল দৌড়ে নিজের অফিসের মধ্যে প্রবেশ করলে, হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে অফিসের দরজা বন্ধ করে চাঁদার দাবিতে তার হাত-পা বেঁধে পুনরায় এলোপাতাড়িভাবে কিল-ঘুষি মারেন এবং লাঠি ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেন। ‎এছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আটক রেখে বাড়ি থেকে দাবিকৃত চাঁদা আনার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

এ সময় জুয়েলের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা ভয়ভীতিসহ খুন-জখমের হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এছাড়া দাবিকৃত চাঁদা না দিলে জুয়েলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে দেবে না বলেও হুমকি দেন মারুফ।

‎পিরোজপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক মাসুদ বলেন, ‘তাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। তার কোনো কার্যকলাপের দায় দল নেবে না। অপরাধী যেই হোক পিরোজপুর জেলা যুবদল চায় তার বিচার হোক।’

‎পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মারুফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’

‎উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির অভিযোগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে গত বছরের ১০ আগস্ট মারুফসহ পিরোজপুর জেলা যুবদলের শীর্ষ তিন নেতা এবং জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলার সদস্য সচিবকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া বহিষ্কৃতদের কোনো অপকর্মের দায়ভার সংগঠন বহন করবে না এ রকম হুঁশিয়ারি দিয়ে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে বহিষ্কৃতদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে বলে কেন্দ্রীয় কমিটি।