সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার প্রাচীনতম একটি গ্রামের নাম শাল্লা। যখন সুনামগঞ্জ মহকুমা ভাগ হয়ে বিভিন্ন থানা প্রতিষ্ঠা হয় জেলার দক্ষিণ প্রান্তের শাল্লা গ্রামের কালনী নদীর তীরে গড়ে তোলা হয় প্রশাসনিক ভবনসহ অফিসিয়াল কার্যক্রম। পরে নদী ভাঙনের কারণে ভবনগুলো বিলীন হতে থাকলে একটা সময় বাহারা ইউনিয়নের ঘুঙ্গিয়ার গাঁও নেয়া হয় প্রশাসনিক ভবন কক্ষ ও সকল কার্যক্রম। শাল্লা গ্রামের মানুষেরা ধীরে ধীরে অন্যত্র বসবাস শুরু করেন। বহু পরিবারের লোকজন নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ইতোমধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছেন।
নদী ভাঙন প্রতিরোধে সরকার কিংবা স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দিশেহারা শাল্লা গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
সরেজমিনে ঘুরে ও শাল্লার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গ্রাম শাল্লায় হাজারো হিন্দু-মুসলিম ভূমিহীন, দিনমুজুর ও কৃষকরা মিলেমিশে বসবাস করে আসছেন।
কিন্তু বিগত দিনে ভয়াবহ নদীভাঙনে ইতোমধ্যে এই গ্রামের অনেক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়েছেন। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারির পর থেকে কালনী নদীর পানি কমতে শুরু করায় ব্যাপকভাবে নদী ভাঙন দেখা দেয়। এতে আরো প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি হুমকির মধ্যে রয়েছে। ফলে কালনী নদী তীরবর্তী এই গ্রামের মানুষজন তাদের বসতভিটা, মাদরাসা, কিন্ডারগার্টেন, বাজার নিয়ে শংঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন বলে গ্রামের লোকজন জানান।
অবিলম্বে সরকার ও স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে তারা আগামী হেমন্ত আসার আগেই বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়লে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোথায় অবস্থান করবেন জানা নেই তাদের।
এ ব্যাপারে গ্রাম শাল্লার বাসিন্দা ভুক্তভোগী মোছা: নূরুন্নেছা বেগম (৫০), আছিয়া বেগম (৭০) মো: রাজিব মিয়া (৪০), মো: মকবুল খাঁ (৪৫), নজরুল ইসলামসহ ( ৬৫) আরো অনেকে এই প্রতিবেদককে বলেন, গত কয়েকমাসের ভাঙনে কবলে ঘরবাড়িসহ ইতোমধ্যে ১৫টি বসতবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে তারা আরো বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙন দেখা দিলে, তাদের বাকি ঘর-বাড়িগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
অবিলম্বে ঘরবাড়ি রক্ষার পাশাপাশি এই প্রাচীনতম গ্রাম শাল্লা রক্ষা করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে জোর দাবিও জানিয়ে গ্রামবাসী জানান, বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ধারস্থ হয়ে কেবলই আশার বাণীই শুনে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে কথার সাথে কাজের কোনো মিল না পাওয়ায় তারা হতাশাগ্রস্থ।
গ্রামবাসী নদী ভাঙনের কবল থেকে তাদের রক্ষা করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে পানি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে জোর দাবিও জানান। সরকার দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে আগামী হেমন্ত আসার আগেই পুরো অঞ্চলটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে গ্রামবাসী আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নদী ভাঙন রোধ প্রকল্পের আওতায় একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।