নবনিযুক্ত জিএমপি কমিশনার

পুলিশিং সেবার উন্নয়নে জনগণ ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রয়োজন

রোববার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে জিএমপি কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

মোহাম্মদ আলী ঝিলন, গাজীপুর

Location :

Gazipur
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন নবনিযুক্ত জিএমপি কমিশনার ইসরাইল হাওলাদার
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন নবনিযুক্ত জিএমপি কমিশনার ইসরাইল হাওলাদার |নয়া দিগন্ত

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার ইসরাইল হাওলাদার বলেছেন, ‘পুলিশিং সেবার উন্নয়নে জনগণের অংশগ্রহণ এবং সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা ছাড়া কোনোভাবেই সামনে এগিয়ে যেতে পারব না। এজন্য আপনাদের মাধ্যমে গাজীপুরবাসীর সহযোগিতা চাচ্ছি।’

রোববার (২৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে জিএমপি কার্যালয়ের সভাকক্ষে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ইসরাইল হাওলাদার বলেন, ‘নির্বাচনে জিএমপি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনকালে নগরবাসী যাতে নিরপেক্ষভাবে নিজের ভোট দিতে পারেন সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনকালে ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতাসহ যেকোনো পরিস্থিতি শক্তহাতে প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি হিসেবে ইতোমধ্যে সারাদেশে পুলিশের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সামাজিক অস্থিরতা, মব কালচার রোধে আমরা সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশের কাজের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে পুলিশের শৃঙ্খলা ও মনোবল। আপনারা জানেন, এই দুটোতেই আমাদের ঘাটতি হয়ে গেছে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে। যদিও আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলোকে রিকভার করেছি। বাকি ঘাটতি বা দুর্বলতা যদি কোথাও থাকে সেগুলোকে আমি চেষ্টা করব যেন অতি দ্রুত রিকভার করা যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশিং কাজে জনসম্পৃক্ততার কোনো বিকল্প নেই। জনগণের সহযোগিতা ছাড়া আধুনিককালের পুলিশ প্রায় অচল। নগরবাসীকে পুলিশিং কাজে আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে ব্যবস্থা নেবে জিএমপি।’

ইসরাইল হাওলাদার বলেন, ‘অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রেখে নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধান ছাড়াও জিএমপিতে আমাদের অসংখ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রাধান্য দিয়ে চ্যালেঞ্জগুলোকে আমি তিনটি ভাগে ভাগ করতে চাই। একটি হলো ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সাথে নগরবাসী ছাড়াও নগরের ওপর দিয়ে যাতায়াতকারী সমস্ত জনগণ ও দেশবাসীর ওপর প্রভাব পড়ে। আরেকটি হলো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নির্বাচন। এই মুহূর্তে আমাদের এই তিনটিকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করতে হবে। অপরাধের ক্ষেত্রে আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, উপলব্ধি করে করতে পেরেছি সেটার মধ্যে ছিনতাই, চুরি, যাত্রী হিসেবে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় এবং মাদক এই চারটি অপরাধের প্রকোপ এখানে বেশি। এইটা নিশ্চিতভাবে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।’

অপরাধ নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মাদকের ভয়াবহ বিস্তার হয়েছে। এ জেলায় বসবাসকারী জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগ বাইরের জেলার অধিবাসী এবং অনেকেই ভাসমান। আর আমাদের টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত বিআরটি প্রজেক্ট অসম্পূর্ণ বা ত্রুটিপূর্ণ। এই বিআরটি প্রজেক্ট আমাদের অপরাধের চ্যালেঞ্জকে আরো কঠিন করে তুলেছে। ছিনতাই, চুরি ছাড়াও ত্রুটিপূর্ণ বিআরটিএ প্রজেক্টে সড়ক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে এবং যার ফলে প্রতিনিয়ত সড়কে অসংখ্য প্রাণ ঝড়ে যাচ্ছে।’

অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর মেট্রোপলিটন এলাকায় পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিটি শিল্প কলকারখানায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিশ্চিত করে জাতীয় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেসব মামলা হয় সেই মামলার তদন্ত করা পুলিশের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মামলাগুলোর যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হয় সে বিষয়ে আমরা সচেষ্ট থাকব এবং তদন্তের মান উন্নয়ন আমাদের করতেই হবে। যেসব সার্ভিসের জন্য পুলিশের কাছে নগরবাসী আসেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও পুলিশ ভেরিফকেশন। এই সমস্ত সার্ভিস কিভাবে আরো সহজ করা যায় সেবিষয়ে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আপনারা জানেন, জিডির বিষয়ে ইতোমধ্যে অনলাইন জিডি গ্রহণের করার ব্যবস্থা হয়েছে।’

জেলার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে জিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ত্রুটিপূর্ণ বিআরটি যেমন আছে, তেমন শহরেও একটা বড় সমস্যা আছে রেল লাইন বা রেল ক্রসিং। আমরা সাময়িকভাবে কোনো একটা মোড় বন্ধ করে একটা ইউটার্নের ব্যবস্থা করব। যদি দেখি এটা সাকসেস তাহলে সেটা রাখবো, আর যদি দেখি নগরবাসীর সমস্যা হচ্ছে তাহলে রিথিম করব। নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা যাতে উন্নত রাখা যায় সেই ব্যবস্থা করব।’

কমিশনার ইসরাইল হাওলাদার বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালে ১৭তম বিসিএসের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে যোগদান করেন। ডিএমপি, র‌্যাব, মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্পাঞ্চল পুলিশে থাকাকালে দায়িত্ব পালনে দক্ষতার পরিচয় দেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিক ছাড়াও জিএমপির অন্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত রোববার (১৬ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে ইসরাইল হাওলাদারকে জিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ১৯ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।