রূপগঞ্জে আ’লীগকে পুনর্বাসনে আনছর আলীর উদ্যোগ!

গত ২ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্বাচল উপশহরের ১০ ও ১১ নম্বর সেক্টরের গোলচত্বর এলাকায় আয়োজিত স্থানীয় সমাজসেবক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনীর নামে কর্মী সমাবেশ করে আলোচনায় আসেন তিনি।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা

Location :

Rupganj
দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে খাবার টেবিলে আনছর আলী
দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে খাবার টেবিলে আনছর আলী |ছবি : নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য আনছর আলী।

গত ২ এপ্রিল থেকে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত পূর্বাচল উপশহরের ১০ ও ১১ নম্বর সেক্টরের গোলচত্বর এলাকায় আয়োজিত স্থানীয় সমাজসেবক, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, শিক্ষক, সাংবাদিক, আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনীর নামে কর্মী সমাবেশ করে আলোচনায় আসেন তিনি।

তিনি তিনটি গরু ও একটি মহিষ জবাই করে মেজবানী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে তিনি হাস্যোজ্জ্বল ছবিও তুলেছেন। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।। দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকেই মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া থাকলেও অনুষ্ঠানের পর থেকে আনছর আলীর নির্দেশ পেয়ে তারা এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন।

এর আগে রূপগঞ্জ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে আনছর আলী প্রকাশ্যে ঈদ সামগ্রী ও ঈদ বকশিস বিতরণ করেন। আনছর আলীর এ সকল কর্মকাণ্ড স্থানীয় পত্রিকায় নিয়মিতই প্রকাশিত হয়েছে। তার এ উদ্যোগ স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও কৌতুহল তৈরি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশংসিতও হয়েছে।

আনছর আলী উপস্থিত নেতাকর্মীদের বলেছেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। ভাঙচুর করা বাড়িঘরের ছবি তুলতে হবে। নির্যাতিতদের বক্তব্য ভিডিও করতে হবে। বিএনপি-জামায়েতের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেই আন্দোলন সংগ্রাম করতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধেও প্রত্যেককে সক্রিয় হতে হবে।

জানা গেছে, সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আনছর আলী বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। তার নামে-বেনামে পূর্বাচল উপশহরের বিপুল সংখ্যক প্লট রয়েছে। ঢাকার চকবাজার মডেল থানায় ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলার আসামি আনছর আলী প্রকাশ্যে জমকালো আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করেন। এ অনুষ্ঠানে ওলামালীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লাদেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নবী হোসেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি জিলানী ভান্ডারী, রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আশরাফুল হক মিঠু, রূপগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন, ২ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান বাদশা, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জজ মিয়া দেওয়ান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম, ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মুরাদ হোসেন, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য জিন্নাত আরা ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন বিভিন্ন পরিবহনে নেতাকর্মীদের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন।

এ অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে রাতে উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবকলীগের পদধারী নেতারা অংশ নেন বলে জানা গেছে।

ঘরোয়া আলোচনায় নেতাকর্মীদের আনছর আলী বলেন, ‘তিনটি মামলা নিয়েও আমি পালিয়ে যাইনি। আপনাদেরও কাউকে পালিয়ে থাকতে হবে না। আজ থেকে সবাই বাড়িতেই থাকবেন। কেউ গ্রেফতার হলে তার দায়িত্ব আমার। দু’তিন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাদের আমি প্লট দিয়েছি। আপনারা নিশ্চিত থাকুন কাউকে গ্রেফতার করা হবে না।’

রূপগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গ্রেফতার নেতাদের জামিনের অর্থ ও পরিবারের সদস্যদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করছেন আনছর আলী।

ঈদ পুনর্মিলনীতে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী বলেন, রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলতে আনছর আলীর এ উসকানি দিচ্ছে। তিনি নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে নির্দেশ দিচ্ছেন। এমনকি মাঠে নামার সময় এক গ্রুপ সামনে, আরেক গ্রুপ পেছনে থাকতে বলেছেন। সামনের গ্রুপ আক্রান্ত হলে পেছনের গ্রুপকে হামলা চালাতে বলেন। কেউ হামলা করতে এলে তাদের চরম শিক্ষা দেওয়ার কথাও বলেছেন।

ঈদ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা টানা নয় দিনের ছুটিতে থাকায় ফাঁকা পেয়ে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের পরিকল্পনায় নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের ছক করে আনছর আলী এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রূপগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান আমার জানা নেই। সন্ত্রাসী, দোষী ও আসামিদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম বলেন, ‘মামলার আসামিরা যত প্রভাবশালীই হোক অবশ্যই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’