জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী মোজাম্মেল হকের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলাকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
এতে হাসপাতালের সকল বিভাগে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সরেজমিন গিয়ে শিশু, অ্যানেসথেসিয়া, অবস অ্যান্ড গাইনী, অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি ও এনসিডি কর্নারসহ একাধিক কক্ষে কোনো চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্ট কর্মীকে পাওয়া যায়নি। মেডিক্যাল অফিসারের ২২ নম্বর কক্ষে রোগীর ভিড় থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
সবচেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন ইপিআই (টিকাদান) কক্ষে শিশুকে নিয়ে আসা অভিভাবকরা। মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ইলিয়াস খান অনুপস্থিত থাকায় বহু মা-বাবা টিকা দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় অপেক্ষা করছিলেন।’
জানা যায়, গত ১২ নভেম্বর একটি মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে এনসিপির উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী মোজাম্মেল হকের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় এজাহার দায়ের করা হয়। পরে অন ডিউটি অবস্থায় হাসপাতালের একমাত্র নিরাপত্তাকর্মী শাকিলকে (৩৮) পুলিশ আটক করে। আর এতেই চিকিৎসক ও স্টাফদের মধ্যে শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে।
ইপিআই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ইলিয়াস খান বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি টাইফয়েড টিকাদানে ব্যস্ত ছিলাম। তারপরও শুনছি আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা: সুমাইয়া হোসেন লিয়া বলেন, ‘হাসপাতালের একমাত্র নিরাপত্তাকর্মী শাকিলকে অন ডিউটি অবস্থায় পুলিশ নিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ও মামলায় হয়রানির ভয়ে আছেন। এতে হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হলেও ইমার্জেন্সিসহ সকল বিভাগ খোলা আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আমৃত্যু রোগীর জন্য কাজ করে যাব। হাসপাতালের সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শুনেছি বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ আরো কিছু অজ্ঞাত পরিচয় রেখে মামলা করা হয়েছে। এ কারণেই সবার মাঝে আতঙ্কের কাজটা বেশি হচ্ছে। ঘটনার দিন আমি ছুটিতে ছিলাম তারপরও শুনতেছি আমিও নাকি মামলার আসামি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: জাকির হোসেন বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি) টিকাদান কর্মসূচির কার্যক্রমে ব্যাস্ত ছিলাম। ঘটনার পরে বিষয়টি জানতে পারি। ঘটনাটি ঘটেছে হাসপাতালের বাইরে। আমার হাসপাতালের কেউ সেটায় জড়িত ছিল না। বাইরের কিছু লোকের সাথে গণ্ডগোলটি বাঁধে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে মামলায় আমাকেই প্রধান আসামি করা হয়েছে এবং আমার হাসপাতালের কিছু স্টাফকে মামলায় জড়ানো হচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত আমার সকল দাফতরিক কার্যক্রম জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পরিচালনার জন্য বলা হয়েছে। মামলায় কারা আসামি সে বিষয়টি পুলিশ কর্তৃক ক্লিয়ার না করায় হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। নিরাপত্তাকর্মীকে আটকের পর সমস্ত হাসপাতাল অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের সকল চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার ভিডিও ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যারা ঘটনার সাথে জড়িত নয় এমন কাউকে আটক করা হবে না। ঘটনার সাথে জড়িত আছে এমন সন্দেহে শাকিলকে আটক করা হয়েছে।’



