উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে তরুণীর টিকটক, ৩ জনকে শোকজসহ তদন্ত কমিটি গঠন

গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সরকারি অফিসের চেয়ারে বসে করা এক তরুণীর টিকটিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

সৈয়দ জেলওয়ার হোসেন স্বপন, গোলাপগঞ্জ (সিলেট)

Location :

Sylhet
চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে করা টিকটকে ভাইরাল তরুণী
চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে করা টিকটকে ভাইরাল তরুণী |নয়া দিগন্ত

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সরকারি অফিসের চেয়ারে বসে করা এক তরুণীর টিকটিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এদিকে ঘটনাটি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে এলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে এবং চেয়ারম্যান কার্যালয়ের সিএ ফিরোজ আলীসহ দুই অফিস সহায়ককে শোকজ করা হয়েছে। একইসাথে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বিকেল ৪টার দিকে ওই তরুণী তার ‘সীমাকুইন ২২ দ্যা ব্রান্ড’ টিকটক আইডিতে ভিডিওটি ছাড়েন।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তরুণী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসে এক সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাজ্জাদ নূরের একটি গানের সাথে লিপ সিঙ্ক করছেন। এ সময় পেছনের নেমপ্লেটে লাগানো বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা পরিষদের চেয়ারম্যানদের নাম ও মেয়াদকালের ফলক দেখা যায়। পাশেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লগোর নিচে লেখা চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদ, গোলাপগঞ্জ সিলেট। তবে গোলাপগঞ্জ শব্দটি আংশিক রয়েছে। এছাড়া টেবিলের বামপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে মহান বিজয় দিবসের বানানো একটি ক্রেস্ট দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি প্রায় সাড়ে ৫ হাজারের অধিক ভিউ হয়েছে। এতে ৫৪২টি রিঅ্যাকশন ও ২৮টি কমেন্ট রয়েছে।

এদিকে ভিডিওটির কমেন্টে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘অভিনন্দন উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবা’।

একাধিক ব্যক্তি জানান, চেয়ারম্যান অফিস তালা দেয়া থাকে। সেই অফিসের তালা খুলে কারা তরুণীকে টিকটিক ভিডিওর সুযোগ করে দিলো তা তদন্ত করে দেখা দরকার। একইসাথে এর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

তবে ওই তরুণীর পরিচয় এখনো জানা যায়নি এবং সংশ্লিষ্টরা তরুণীর পরিচয় জানতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান কার্যালয়ের সিএ ফিরোজ আলী বাদি হয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

এদিকে ঘটনায় উপজেলা পরিষদের সিএ ফিরোজ আলী, অফিস সহায়ক রাহেল আহমদ ও আব্দুল কাদিরকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা যায়।

এছাড়া ওই ঘটনার রহস্য উদঘাটনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উপজেলা প্রকৌশলী মো: কামরুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিলটন চন্দ্র পালের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে জানান, ‘উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কার্যালয়টি তালা দেয়া থাকে। সেখানে ওই তরুণী কিভাবে ঢুকেছে এ নিয়ে প্রকৌশলীকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া অফিসের সিএসহ তিনজনকে শোকজ করা হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনজুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম আমেরিকায় চলে যান। পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার সারাদেশের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করেন। ফলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি শূন্য রয়েছে এবং অফিসটি তালা দেয়া রয়েছে।