শ্রীপুরে যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারে সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা

এ ব্যাপারে শুক্রবার সকালে গাজীপুর মহানগরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিআরআরআই) অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান।

মো: আজিজুল হক, গাজীপুর মহানগর

Location :

Gazipur
শ্রীপুরে সেনাবাহিনীর ব্রিফিং
শ্রীপুরে সেনাবাহিনীর ব্রিফিং |নয়া দিগন্ত

গাজীপুরের শ্রীপুরে যৌথবাহিনীর অভিযান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

এ ব্যাপারে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে গাজীপুর মহানগরের বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিআরআরআই) অস্থায়ী সেনাক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন ১৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান।

সেনাবাহিনী জানায়, বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোররাতে গাজীপুর আর্মি ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং পুলিশ ও র‌্যাবের প্রত্যক্ষ সহায়তায় শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নে একটি যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও এলাকাবাসীর সহায়তায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও শ্রীপুর এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত এনামুল হক মোল্লাকে তার নিজ বাড়ির পানির ট্যাংকের ভিতর থেকে গ্রেফতার করা হয়। একইসাথে তার আরো ছয় সহযোগীকেও আটক করা হয়।

অভিযান চলাকালে দু’টি বিদেশী পিস্তল, তিনটি ম্যাগজিন, চার রাউন্ড গুলি, দু’টি ইলেকট্রিক শক ডিভাইস, চারটি ওয়াকিটকি সেট, দু’টি লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল, চারটি লাঠি, একটি হ্যামার নেইল গান ও একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন এনামুল হক মোল্লা (৫০), শওকত মীর (৪৫), জাহিদ মিয়া (৪০), মোস্তফা কামাল (৩২), সিদ্দিকুর রহমান (৩৪), বুলবুল মিয়া (৩৫) ও তোফাজ্জল হোসেন (৪৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এনামুল হক মোল্লা গাজীপুরের বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের মৃত আহাদ আলীর ছেলে। তিনি প্রায় ১৫ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। গত বছর দেশে ফিরে গাজীপুর-৩ আসনে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হন। সম্প্রতি বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেন এবং নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণাও শুরু করেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফর রহমান বলেন, ‘একটি মহল এনামুল হক মোল্লার গ্রেফতারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দেয়ার পাশাপাশি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে নয়। আমরা ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে। যারা এ ব্যাপারে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদেরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী মহল অভিযানের পর এনামুল হক মোল্লার বাড়ি থেকে ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি হারানোর মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর চেষ্টা করছে। এ ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারণায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে কর্নেল লুৎফর রহমান এলাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যৌথবাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করায় আমরা কৃতজ্ঞ। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত অন্যদের সম্পর্কেও তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানাচ্ছি। তারা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাজীপুর জেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।’

শ্রীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘যৌথবাহিনীর অভিযানে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে। পরে আদালতের নির্দেশে গ্রেফতারকৃতদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’