সিংগাইরে আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে দারোগাসহ ৩ পুলিশ আহত, গ্রেফতার ৪

একপর্যায়ে সকল আসামি মিলে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে কনস্টেবল মাহাবুবুর রহমান ও শহিদুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি মারধর করে হুমায়ুনকে নিয়ে পালিয়ে যায়।

সোহরাব হোসেন, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ)
সিংগাইরে আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে দারোগাসহ ৩ পুলিশ আহত, গ্রেফতার ৪
সিংগাইরে আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে দারোগাসহ ৩ পুলিশ আহত, গ্রেফতার ৪ |নয়া দিগন্ত

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সাংবাদিক মাসুম বাদশাহর ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে এক সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) ও দুই পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন।

সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জে ও এম তৌফিক আজম। তিনি বলেন, আহত তিন পুলিশ সদস্য প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।

এর আগে রোববার আহত এসআই এবং ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পার্থ শেখর ঘোষ নয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহারভুক্ত চারজনকে গ্রেফতার করেছেন।

গ্রেফতাররা হলেন উপজেলার ধল্লা লক্ষীপুর গ্রামের মরহুম গিয়াস উদ্দিন গাদুর ছেলে আক্তার হোসেন (৪৫), তার স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার চায়না (৩৫), মরহুম রুহুল শিকদারের ছেলে আল ইসলাম (২৯) ও মো: আব্বাস মিয়ার ছেলে আরিফ হোসেন (২৩)।

এর আগে গত ১৫ এপ্রিল সকাল পৌনে ১০টার দিকে ভোরের কাগজ পত্রিকার সিংগাইর প্রতিনিধি ও দৈনিক ফুলকির স্টাফ রিপোর্টার মাসুম বাদশাহর ওপর হামলা হয়। ওই ঘটনায় মাসুম পরদিন জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮-১০ জনের নামে থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পার্থ শেখর ঘোষ ১৯ এপ্রিল দুপুরের দিকে কনস্টেবল মাহাবুবুর রহমান ও শহিদুল ইসলামকে সাথে নিয়ে ২ নম্বর আসামি হুমায়ুনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। এ সময় তার পরিবার ও আশপাশের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে মব জাস্টিস পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আসামি হুমায়ুনকে গ্রেফতারে বাধা দেয়। পরে পুলিশ বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে। আসামি হুমায়ুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে গলা চেপে ধরে হত্যা চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সকল আসামি মিলে লোহার রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে কনস্টেবল মাহাবুবুর রহমান ও শহিদুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি মারধর করে হুমায়ুনকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করেন। একইসাথে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে রোববার দুপুরে আদালতে পাঠায়।

এদিকে, হুমায়ুনের পরিবারের লোকজন পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে। ঘটনার পরদিন হুমায়ুনের স্ত্রীকে দিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। এতে ওই নারী পুলিশি অভিযানে আহত হওয়ার কথা অভিযোগে উল্লেখ করলেও তিনি স্বশরীরে জেলা সদরে গিয়ে অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সরেজমিন স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর এমন ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির জোর দাবি জানিয়েছেন। থানা পুলিশের দাবি, তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অথচ ওই নারী চিকিৎসা না নিয়ে পরদিন এসপি অফিসে গিয়ে অভিযোগ দেয়ার বিষয়টি পুলিশকে ফাঁসানোর চেষ্টা ছাড়া অন্য কিছু নয়।

অভিযুক্ত হুমায়ুনের বাড়িতে গিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে পরিবারের কাউকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার বোন জেলা আওয়ামী যুব মহিলালীগ নেত্রী ছালেহা জাহান বলেন, পুলিশের ওপর হামলার বিষয়ে আমি জানি না। আমি ওখানে ছিলামও না। এরপর তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: জসিম উদ্দিন বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে।