ভোলায় তিন হাজার শিশু মাছ ধরছে, স্কুলে যেতে পারছে না

জেলে পরিবারের শিশুদের অনেকেই এ বয়সেই দক্ষ মাঝি হয়ে ওঠে। প্রতি বছর তিন থেকে চারটি মাছ ধরার ট্রলার দুর্ঘটনার শিকার হয়, এতে বেশিভাগ শিশুই মৃত্যুবরণ করে।

মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, চরফ্যাশন (ভোলা)

Location :

Bhola
ভোলায় তিন হাজার শিশু মাছ ধরছে, স্কুলে যেতে পারছে না
ভোলায় তিন হাজার শিশু মাছ ধরছে, স্কুলে যেতে পারছে না |নয়া দিগন্ত

ভোলার চরফ্যাসন উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার শিশু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছে। দারিদ্র্যের তাড়নায় সাত থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী এসব শিশু বিদ্যালয়ের বদলে নদীতে নামছে পরিবারের আয় বাড়াতে। ফলে উপকূলীয় এই জনপদের শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

আসলামপুর এলাকার শিশু হাসিব (১১) ও হারিচ (১৪) ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে মাছ ধরছে। তাদের বাবা ফারুক মাঝি জানান, পরিবারের ছয় সদস্যের ভরণপোষণ একা সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে দুই ছেলেকে নিয়েই মাছ ধরতে হয়।

শুধু মাছ ধরা নয়, শিশুরা বাবুর্চির সহকারী, জাল টানা ও মাছ বাছাইয়ের কাজেও যুক্ত হচ্ছে।

চর মাদ্রাজ এলাকার ট্রলারমালিক লোকমান হোসেন বলেন, অভাবের তাড়নায় শিশুরা নৌকা ও ট্রলারে নানা কাজে যুক্ত হচ্ছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, চরফ্যাসন উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক জেলে রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪৪ হাজার ১০৫ জন। সাগরগামী জেলের সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৬১ জন। সাগরগামী ট্রলার রয়েছে এক হাজার ৩৬৫টি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, জেলে পরিবারের শিশুদের অনেকেই এ বয়সেই দক্ষ মাঝি হয়ে ওঠে। প্রতি বছর তিন থেকে চারটি মাছ ধরার ট্রলার দুর্ঘটনার শিকার হয়, এতে বেশিভাগ শিশুই মৃত্যুবরণ করে।

সামরাজ মৎস্যঘাটের জেলে ইমন বলেন, আমাদের ছেলেদেরও মাছ ধরতেই হবে। লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য নেই।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, আর্থিক অনটনের পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবও শিশুদের স্কুল থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ.কে.এম. আবুল খায়ের বলেন, সরকারি উপবৃত্তি ও বিনামূল্যের বই দেয়া সত্ত্বেও পরিবারে আয় বাড়াতে শিশুরা স্কুলে যায় না। অনেক শিশুর নাম স্কুলের খাতায় থাকলেও তারা সময় কাটায় নদীতে।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, দারিদ্র্যের কারণে শিশুরা জেলে পেশায় যুক্ত হচ্ছে। অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা চলছে।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো: মামুন হোসেন জানান, শিশু জেলেদের বিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত করা গেলে তাদের উপবৃত্তির আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসনা শারমিন মিথি বলেন, শিশু শ্রম নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও পরিবারের অভাবের কারণে শিশুরা বিদ্যালয় ছেড়ে নদীতে মাছ ধরতে যায়। আমাদের পক্ষ থেকে তাদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।