রাঙ্গামাটির পাহাড়ি জনপদে এবারো বর্ণাঢ্য আয়োজনে ঐতিহ্যবাহী ‘ভৈল-ঢেওসি’ উৎসব পালন করেছে নেপালের বংশোদ্ভূত গুর্খা সম্প্রদায়। দীপাবলি ও কালীপূজাকে ঘিরে শতবর্ষ ধরে চলে আসা এ উৎসব যেন ঐক্য, আনন্দ ও সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে আজও বেঁচে আছে পাহাড়ের পল্লীতে।
সোমবার ও মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দু’দিনব্যাপী উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ উৎসব পালন করে সম্প্রদায়টি।
জানা যায়, পার্বত্য অঞ্চলে নেপালের বংশোদ্ভূত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গুর্খা সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো ভৈল-ঢেওসি উৎসবে অংশ নেয়। যা এখন সাংস্কৃতিক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহর জেলা বোর্ডের কন্ট্রাক্টর পাড়া, মাঝেরবস্তি, আসামবস্তি ও গর্জনতলীসহ নানা এলাকায় এ উৎসবের রঙ ছড়িয়েছে।
গুর্খা সংস্কৃতিতে এ উৎসবের প্রথম দিনটি পরিচিত ‘ভৈল’ আর দ্বিতীয় দিন ‘ঢেওসি’ নামে। উৎসবের এ দু’দিনে সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-যুবা এমনকি শিশুরাও দলে দলে বেরিয়ে পড়ে পাড়া-মহল্লায়। হাতে বাঁশের লাঠি, মুখে ছন্দময় গান আর পায়ের তাল মিলিয়ে তারা ঘুরে বেড়ায় বাড়ি বাড়ি। এ সময় লোকজনের বাড়িতে গিয়ে গান গেয়ে আশীর্বাদ জানায় তারা। পরে বিনিময়ে পায় চাল, টাকা, শাকসবজি, খাবার ও পানীয়সহ নানা উপহার।
এদিকে উৎসবের দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাই টিকা’ পর্ব। এদিন বোনেরা দধি ও চাউল মিশিয়ে ভাইদের কপালে টিকা দেয়, আর ভাইয়েরা আশীর্বাদস্বরূপ বোনদের হাতে বেঁধে দেয় ‘তাজ’। এ রীতি দিয়েই সমাপ্তি ঘটে দু’দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী এ ‘ভৈল-ঢেওসি’ উৎসবের।
জানা যায়, সরকার পাহাড়ে বসবাসরত গুর্খা সম্প্রদায়কে দেশের স্বীকৃত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ স্বীকৃতি তাদের সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে দিয়েছে নতুন প্রেরণা।
পাহাড়ের এ ভৈল-ঢেওসি উৎসব তাই শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয় বরং গুর্খা সম্প্রদায়ের ঐক্য, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক প্রাণচাঞ্চল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে রাঙ্গামাটির সংস্কৃতিচিত্রে।



