এবারের ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পাহাড়ে অবস্থিত ১০টি অপরূপ ঝরনায়। বৃষ্টির কারণে ঝরনাগুলো এখন পানিতে টইটম্বুর। দেখা যাবে ঝরনা মনমোহনি চিত্র। পাশাপাশি উপজেলার অন্য পর্যটন স্পটও ঘুরে দেখতে পারবে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা।
জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলা ঝরনার রানি হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। এখানে বছরের যেকোনো সময় দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে আসে ভ্রমণপিপাসুরা। এবারের ঈদের ছুটিতে মানুষের ঢল নামতে পারে খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, হরিনাকুন্ড ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা, ছাগলকান্দা ঝরনা, বাঘবিয়ানী ঝরনা ও মেলখুম ট্রেইলে।
ইজারাদাররা জানায়,ঝরনায় যাওয়ার জন্য পর্যটকদের জন্য গাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ভারি বর্ষণের সময় ঝরনায় না যাওয়া ভালো।
রূপসী ঝরনা
প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝরনা। আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নূপুরধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়।
সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। বছরের পর বছর ঝরনার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিষ্কার হলো এটি।
মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোল অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত। মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝর্ণাগুলোর চেয়ে এই ঝরনায় যাওয়া অনেকটাই সহজ।
রূপসী ঝর্ণায় যাবেন কীভাবে?
দেশের বিভিন্ন স্থান হতে যে কোন বাসযোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট বাজারে নামতে হবে। এরপর সিএনজি অটোরিকশাযোগে বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এরপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যেতে হবে। অথবা যেকোনো বাস থেকে ব্রিকফিল্ড সড়কের মাথায় নেমে অটোরিকশা ছাড়া আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া যাবে।
খৈয়াছড়া ঝরনা
বর্ষায় ঝরনার আকর্ষণ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি থাকে। তাই পর্যটকদেরও ঢল নামে। এবারের ঈদে অনেক পর্যটক আসবে বলে আশাবাদী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এস এম হারুন।
আকার আকৃতি ও গঠনশৈলীর দিক দিয়ে বেশ বড় এই ঝরনা। এর মোট নয়টি মূল ধাপ ও অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ আছে। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিপাসুরা।
ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তোলে। খৈয়াছড়ায় আছে অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ, যা বাংলাদেশের আর কোনো ঝরনাতে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। তাই খৈয়াছড়াকে বলা হয় বাংলাদেশের ঝরনার রানি।
খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝরনা। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান।
এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, ছড়াসহ অন্তত চারটি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে গা ভেজাবে পর্যটক, তখন মনে হবে পথের এই দূরত্ব খুব সামান্য। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে।
কীভাবে যাবেন খৈয়াছড়া ঝরনায়
ঢাকার যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠবেন। যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই পৌরসদর পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চড়ে পাহাড়ের পাদদেশে যাবেন, সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ঝরনায় যাওয়া যাবে।
বোয়ালিয়া ঝরনা
চারদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। সবুজের নান্দনিকতা, বিস্তীর্ণ পাহাড় ও বনাঞ্চল পরিবেষ্টিত এই বুনো ঝরনা। এখানে আছে বিমোহিত হওয়া প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য। প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় সিক্ত এখানকার জনজীবন যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ তেমনই প্রকৃতির মমতায় ভরপুর। বোয়ালিয়া ঝরনায় আছে ছোট-বড় অন্তত পাঁচটি শাখা ঝরনা ও অনিন্দ্যসুন্দর উঠান ঢাল নামে একটি পাথুরে ঢাল। তাই বর্ষা মৌসুমে আর ঘরে বসে না থেকে একটু ঘা ভেজাতে বোয়ালিয়া ঝরনায় ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা।
এ ট্রেইলার মূল ঝরনায় যাওয়া অপেক্ষাকৃত অন্য ঝরনা থেকে অনেকটা সহজ। বোয়ালিয়া ঝরনার বিশেষত্ব হলো আকৃতি অদ্ভুত ধরনের। এর আকৃতি অনেকটা ব্যাঙের ছাতার মতো এবং বোয়াল মাছের মাথার মতো বিধায় হয়ত এই ঝরনার নাম হয়েছে বোয়ালিয়া।
চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের আওতাধীন বারৈয়ারঢালা ন্যাশনাল পার্ক খৈয়াছড়া সহ পাঁচটি ঝরনা ভ্যাটসহ ৪৯ লাখ টাকা ইজারা পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ আর এন্টারপ্রাইজ।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এস এম হারুন বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে ঝরনাগুলো ভালো পর্যটক আসবেন বলে আশাবাদী। তবে সকল পর্যটকের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন সাথে গাইড নিয়ে যান। আমরা বনবিভাগের প্রশিক্ষণ দেয়া ২০ জন গাইড শুধুমাত্র খৈয়াছড়া ঝরনায়। গাইড ছাড়া গেলে হয়ত অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আমরা সব পর্যটককে সাথে গাইড নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, ঝরনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যাওয়া এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে ঝরনা থেকে নিচে নেমে আসাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।