রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেছেন, ‘নিরীহ, নিরস্ত্র ও নিরপরাধ বুদ্ধিজীবীদের উপর ১৯৭১ সালে চালানো হত্যাযজ্ঞ ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। শুধু বুদ্ধিজীবীদের নির্মূল করার জন্যেই এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়নি, এ জাতি যেন আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেই দুরভিসন্ধি থেকেই এ হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল।’
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. আ ন ম বজলুর রশীদ বলেন, ‘জাতির সূর্যসন্তান, যারা আমাদের জাতীয় চেতনাবোধ ও বাঙালি জাতিসত্তা জাগ্রত করেছিলেন সেই বুদ্ধিজীবীদের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী তালিকার প্রথম শহীদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামসুজ্জোহা ও বাংলাদেশের প্রথম শহিদ মিনার রাজশাহী কলেজে নির্মিত হয়েছিল। রাজশাহীবাসী জ্ঞান-গরিমায় ও চিন্তা-চেতনায় বহুকাল থেকেই অগ্রগামী।’
বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের তাৎপর্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলের যে হাজার বছরের ঐতিহ্য তা জাতীয় চেতনায় ও জাতীয় অগ্রযাত্রায় একক বৈশিষ্ট্যে সব সময় নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে। আমাদের আজকের এ অবস্থানে আসার পেছনে যাদের রক্তের অবদান আছে তাদের আমরা স্মরণ করছি। তাদের স্মরণ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আমরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। ২৪-এর জুলাই-আগস্টে দেশের ছাত্র-জনতা প্রমাণ করে দিয়েছে বাঙালি জাতি একটি অদম্য জাতি। আমরা কারো কাছে মাথা নত করি না।’
নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বাঙালির ইতিহাস জানতে হবে। বাঙালির ইতিহাস শুধু ৭১ থেকে নয়, এ ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছরের। আমাদের এ মাটিতে সভ্যতা লুকিয়ে আছে। উয়ারী-বটেশ্বর থেকে শুরু করে সোনামসজিদ ও গৌড়ের সভ্যতা রয়েছে এখানে। এ সভ্যতা সম্পর্কে জানার মাধ্যমেই আমাদের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও নির্মল করতে পারব।’
এ সময় তিনি বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও সুন্দর দেশে পরিণত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ শাহজাহান, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার ড. জিল্লুর রহমান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান।
অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। আলোচনা সভার শুরুতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট নিরবতা পালনসহ সভা শেষে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।