সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে বালুবাহী ট্রাকের জ্যামে আটকে পড়ে সন্তান প্রসব এবং অক্সিজেনের অভাবে ঘটনাস্থলেই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়ন-সুরমা ইউনিয়নের মধ্যবর্তী রাবারড্রাম এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেল ৪টার দিকে লক্ষীপুর ইউনিয়নের চকবাজার এলাকার মোস্তফা মিয়ার ছেলে
শফিকুল ইসলাম (৩০) তার গর্ভবতী স্ত্রী রৌশনারা বেগম (২৩) কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রাবারড্রাম এলাকায় পৌঁছালে খাসিয়ামারা নদীর বালু পরিবহনকারী গাড়ির দীর্ঘ জ্যামে আটকে পড়েন। খাসিয়ামারা নদী হতে বালু বহনকারী ট্রাক, পিকআপ ও ঠেলাগাড়ির জ্যামে আটকে পড়া অবস্থায় একপর্যায়ে সন্তান প্রসব করেন রৌশনারা বেগম। নবজাতক সন্তান জন্মের পর ১ থেকে দেড় ঘণ্টা এই জ্যামে থাকা অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, ঘটনার পর ওইদিন সন্ধ্যায় নবজাতক সন্তানের লাশ দাফনের পর রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে আসেন নবজাতকের বাবা শফিকুল। লাইভে এসে এ ঘটনার জন্য দেশবাসী ও প্রশাসনের নিকট বিচার চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
শফিকুল ইসলামের শ্যালক ইমরান হোসেন শাওন বলেন, আমার বোনকে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে দোয়ারাবাজার হাসপাতালে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। আমার বোন ছিল ডেলিভারি রোগী। ডাক্তার বললো তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তাই দ্রুত হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা হলাম। কিন্তু রাবারড্রাম পর্যন্ত যাওয়ার পর বালু টানার ঠেলাগাড়ি, পিকআপ ও ট্রাকের টানা দেড় ঘণ্টা জ্যামে আটকা পরে থাকি। তখন বারবার মনে হচ্ছে আমার বোনকে বাঁচাতে পারবো কিনা। শেষপর্যন্ত দেড় ঘণ্টা পর বাচ্চা এখানেই জ্যামে থাকা অবস্থায় ডেলিভারি হয়। তবে বড্ড দেরি হয়ে গেছে, ততক্ষণে আমার বোনের বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারলাম না। এর সম্পূর্ণ দায় প্রশাসনের ও বালু ইজারাদারের। এই বালু টানা গাড়ির কারণে যদি জ্যাম না হতো, তাহলে হয়তো আমার বোনের নবাগত সন্তানটি দুনিয়ার আলো দেখতো। যার যায় সে জানে হারানোর কষ্ট কতটা। এই বালু টানা গাড়ি গুলোর জালায় আমরা এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পরেছি, তাদের কারনে মানুষ সময় মতো অফিস, আদালতে, বা কোন জরুরি কাজে যেতে পারেনা। সেটা জরুরি চিকিৎসা হোকনা কেন, এতে কারো মৃত্যু ও হলো কিনা, তা তাদের দেখার বিষয় না। তাদের খালি টাকা দরকার। এসব কি প্রশাসন দেখেনা, নাকি দেখেও না দেখার বান করে পরে আছেন। আপনার বালুর রাজস্ব বেশি দরকার নাকি জনগনের শান্তি? জীবন রক্ষা করা দরকার। অবস্থা দেখে তো মনে হচ্ছে কে মরলো আর কে বাঁচলো তার দেখার প্রয়োজন নাই। শুধু বালু বেঁচে টাকাটাই সব।
শফিকুল ইসলাম জানান, আমরা সঠিক সময়ে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিলো হাসপাতালে যাওয়ার পর সন্তান প্রসব হবে। কিন্তু বালুবাহী গাড়ির জ্যামে আমাদের কপাল পুড়লো। আমাদের স্বপ্ন সব মাটিতে মিশে গেলো, এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে আমাদের।
দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবু সালেহীন খাঁন বলেন, ‘জন্মের পরে, কোনো কারণে শিশুর নাক, গলার ভেতরে, বা শ্বাস নালীতে কিছুটা ব্লক থাকে, অক্সিজেন দেয়ার পরে, সেটা clear হয়। মাত্র দুই তিন মিনিট অক্সিজেন দিলেই শিশুটি বাঁচার সম্ভাবনা ছিলো।
খাসিয়ামারা নদীর ইজারাদার শাহজালাল কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অভিযোগ যে কেউ তুলতে পারেন, কিন্তু এখানে প্রকৃত ঘটনা কি তদন্ত করলেই সঠিকভাবে জানা যাবে। এবং তিনি বাড়ি থেকে কয়টার সময় রওয়ানা দিছেন আর পরে এখানে এসে কত সময় দেরি করেছেন সেটার জন্য অন্যের দায় দিয়ে আর ফেসবুকে লাইভ করে লাভ কি।
তিনি প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা এই ঘটনার দায় নিতে পারি না। রাস্তাঘাটে জ্যাম লাগতেই পারে। এর জন্য ইজারাদাররা দায়ী হবো কেন।
তবে তিনি জানিয়েছেন, আমরা প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি, এখানে আর এক মিনিটের জন্য জ্যাম হবে না।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি জাহিদুল হক বলেন, ‘এই ঘটনা আমার জানা নেই, আমি যতটুকু জানি এটা একটা ইজারাকৃত নদী, এরজন্যে ছোট ট্রাক চলাচল করে। খবর নিয়ে দেখবো। হয়তো জ্যাম থাকতে পারে কারণ রাস্তা ভাঙা। কাচা রাস্তা পুরো রাস্তাটাই ভাঙা। মোটরসাইকেলেই যাওয়া যায় না।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুপ রতন সিংহ জানান, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে জনসাধারণের চলাচলের অসুবিধার বিষয়টি সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করব।