কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা সাময়িক স্থগিত করার পর এবার অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও স্বাস্থ্য বিভাগ।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরের পর থেকে দুটি টিম পৃথকভাবে তদন্ত শুরু করেছে। এ সময় উভয় টিমের সদস্যরা সিভিল সার্জন ডা: শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আরএমও হোসেন ইমামসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলে জানা যায়।
প্রথমে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার একটি টিম সিভিল সার্জন অফিসে যায়। জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনীর নেতৃত্বে টিম নিয়োগ পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইল ফোন জব্দ করেন। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন দুদক টিমের সদস্যরা।
দুদকের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশনী বলেন, ‘আরএমও ডা: হোসেন ইমামের বড় ভাই কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের উপসহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান ইমামের দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। কেননা তিনি ঘটনার সময় ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছি।’
তিনি জানান, ‘এঘটনার পর থেকেই দুদক সজাগ দৃষ্টিতে রয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে এই ঘটনার প্রকৃত তথ্য উৎঘাটনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
পরে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম অভিযোগ তদন্তে কার্যালয়ে যান। স্বাস্থ্য বিভাগের টিমে নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাক্তার খায়ের আহমেদ চৌধুরী।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, তার নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও আমরা বিশ্লেষণ করেছি। পাশাপাশি আরএমও ডাক্তার হোসেন ইমামের সংশ্লিষ্টতাসহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে বিস্তারিত জানাতে না পারলেও কিছু একটা যে ঘটেছে, সে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তদন্তে শেষে প্রকৃত ঘটনা পাওয়া যাবে বলে আশা রাখি।’
এসময় সোমবার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে সস্ত্রীক আসেন আরএমও ডা: হোসেন ইমাম। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি ওই ঘটনার অস্বীকার করেন।
এদিকে, তদন্ত কমিটির কাছে নিজের অবস্থান জানানোর পর হোসেন ইমাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে যাওয়ার পথে গেটে ছাত্র-জনতা তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় তিনি ছাত্র-জনতার সাথে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ডা: হোসেন ইমাম ছাত্র-জনতার দিকে তেড়ে এসে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেন। পরে উপায়ন্ত না দেখে তিনি সিভিল সার্জন আফিসের ভিতরে আশ্রয় নেন। এ সময় তাকে তাকে লক্ষ্য করে ছাত্র-জনতাকে ডিম ছুড়তে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার চাপের মুখে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন অফিসের ১১-২০ গ্রেডের শূন্যপদে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় শনিবার (২৫ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি। রোববার সকালে নিয়োগ বাতিল ও সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের অপসারনের দাবিতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের ব্যস্ততম এনএস রোড অবরোধ করে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। পরে সড়ক থেকে উঠে এসে সিভিল সার্জন অফিসে ভবনের নিচে অবস্থান নেয় তারা। এসময় উপায়ন্ত না পেয়ে বাধ্য হয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে নিচে নেমে ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নিতে দু’দিন সময় প্রার্থনা করেন। পরে দু’দিনের মধ্যে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি এবং নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবস্থান ধর্মঘট তুলে নেয় ছাত্র-জনতা।
গত শুক্রবার কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি পদের ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে ৫০ ভাগের কিছু বেশি পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু পরীক্ষার আগেই রাত থেকেই কুষ্টিয়া শহরের একটি বাসায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীর রহস্যজনক প্রবেশ ও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বের হওয়ার দৃশ্যে বিতর্কের জন্ম দেয়। আর এই ঘটনাগুলো হয় স্বয়ং জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডা: হোসেন ইমামের শহরের কালিশংকপুরের বাড়িতে।



