সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের কনু মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে বাধা দেয়ায় এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে হাবিবুর রহমানসহ জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মান্নারগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।
পরে দুপুর ২টার দিকে পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের কনু মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে দ্বিতীয় মানববন্ধন করে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে ইউনিয়নের নতুন নগর গ্রামের আব্দুল মালিকের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়রা হাবিবুর রহমানকে আটক করে পুলিশে দেয়। হাবিবুর রহমান ওই গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে।
সরেজমিনে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে আহত শিক্ষার্থী সুরমা আক্তার (১৫) মান্নারগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামে বেড়াতে যায় তার স্কুল পড়ুয়া বান্ধবী পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের নতুনদ নগর গ্রামের তুলনা আক্তার, লাইজা আক্তার ও লছমিনা আক্তার। পরে সারাদিন সুরমার বাড়িতে অবস্থানের পর তার তিন বান্ধবী সন্ধ্যায় সুরমার মা ও ভাইকে অনুরোধ করে আব্দুল মালিকের মেয়ে লছমিনা আক্তারের বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে আসে। এইদিন রাত ১২টার দিকে তারা চার বান্ধবী বসে হাতে মেহেদীর সাজসজ্জা করছিলেন।
এসময় বসতঘরের পেছনের দরজা খুলে বাহিরে যায় আব্দুল মালিকের ছেলের বউ এবং লছমিনার ভাইয়ের স্ত্রী চাপা বেগম। এমন সময় সুযোগ বুঝে হাবিবুর রহমান বসতঘরে ঢুকে এবং সুরমা আক্তারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে সে ভিকটিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এই ঘটনায় ভিকটিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা মেয়েটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। দায়ের কোপে হাতের একটি হাড় ভেঙে যাওয়ায় তার অবস্থা এখনও সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।
বক্তারা বলেন, ঘটনার পর এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা, জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মেয়েরা ভয়ে স্কুল-মাদরাসায় যেতে সাহস পাচ্ছে না।
এলাকাবাসীর দাবি পূর্বপরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ভবিষ্যতে যেনো আর কোনো মেয়ের এভাবে ইজ্জতহানী না হয় এবং মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে না হয়। তাই হাবিবুর রহমানসহ এর সাথে জড়িত সকলকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানান।
এলাকাবাসীর উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ভিকটিমের চাচা আ: মতিন, বিল্লাল হোসেন, মামা জাহাঙ্গীর আলম, চাচাতো ভাই হাফিজুল ইসলাম, স্থানীয় শহিদুল ইসলাম, তাহির আলী, ময়না মিয়া, কবির হোসেন, শরিফ উদ্দিন, খলিলুর রহমান ও আলিম উদ্দিন।
কনু মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- শিক্ষক নিজাম উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন, জমসিদ আলী, আসকর আলী, ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী আমিনা আক্তার, রুজিনা আক্তার।
এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত নয় দাবি করে সুরমা আক্তারের তিন বান্ধবী জানান, এঘটনায় পূর্বে তারা কিছুই জানতেন না। তাদের চোখের সামনেই আকস্মিকভাবে হুট করে হাবিবুর রহমান এসে সুরমা আক্তারকে কোপাতে থাকে। তারা হাবিবুর রহমানকে জাপ্টে ধরে চিৎকার দেয়। হাবিবুর রহমান তাদেরকে ফেলে দিয়ে দা-দিয়ে তিনবার আক্রমণ করে। পরে বাড়ির লোকজন এসে তাকে আটক করে।
এ বিষয়ে দোয়ারাবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহিদুল হক জানান, ঘটনার রাতে পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থল হতে অভিযুক্তকে আটক করে। তদন্ত সাপেক্ষে এর সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।



