ইলিশের ভরা মৌসুমেও বেতাগীর বিষখালীতে ইলিশের আকাল, বাজারে দাম চড়া

এক সময় এই নদী ছিল ইলিশে ভরপুর। এখন সারা রাত জাল ফেলেও অনেক সময় একটা ইলিশও পাওয়া যায় না।

বেতাগী (বরগুনা) সংবাদদাতা

Location :

Barguna
ইলিশের ভরা মৌসুমেও বেতাগীর বিষখালীতে ইলিশের আকাল
ইলিশের ভরা মৌসুমেও বেতাগীর বিষখালীতে ইলিশের আকাল |নয়া দিগন্ত

ইলিশের মৌসুম চলছে পুরোদমে। তবে বরগুনার বেতাগী উপজেলার প্রাণপ্রবাহ বিষখালী নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ মিলছে না। প্রতিদিন শত শত জেলে নদীতে মাছ ধরতে গেলেও ফিরছেন হতাশ হয়ে। জালে উঠে আসছে দুই থেকে চারটি ছোট আকারের মাছ, কখনো কিছুই মিলছে না। এতে জেলেদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, আর বাজারে ইলিশের দাম হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

বেতাগী উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে ইলিশ মাছ ধরছেন মাত্র ৩০০ জন। বাকিরা দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরছেন কিংবা সাগরের অন্যান্য মাছ কিনে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন শতাধিক জেলে বিষখালী নদীতে ইলিশের জাল ফেলছেন। কেউ ফিরছেন খালি হাতে, কেউ ফিরছেন ছোট ও মাঝারি আকারের দু‘চারটি ইলিশ নিয়ে।

সরেজমিনে বেতাগীর মোকামঘাট, ঝোপখালী, পুটিয়াখালী, মোকামিয়া, বদনীখালী, কালিকাবাড়ি ও বিবিচিনি ইউনিয়নের ফুলতলা এলাকার জেলেদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ায় আয়-রোজগার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। দিনভর পরিশ্রম করেও ন্যূনতম খরচ তুলতে পারছেন না তারা। নদীতে এখন যে ইলিশ মিলছে, তা বেশিভাগই ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের। বড় আকারের ইলিশ মিলছে না। মাঝে মধ্যে দু‘একটি কেজি ওজনের ইলিশ পাওয়া গেলেও দাম নাগালের বাইরে।

বেতাগী পৌর শহরের মৎস্য ব্যবসায়ী কমল দাস অভিযোগ করেন, বিষখালী নদীর বিভিন্ন অংশে বালুচর জমে নাব্যতা হারিয়েছে। তীব্র খরা, শিল্পবর্জ্য, নদীর প্রবাহ কমে যাওয়া ও অবৈধ জালের ব্যবহার ইলিশের আবাসস্থল নষ্ট করছে। এসব কারণে প্রজননের সময় মাছ নদীতে আসতে পারছে না।

ঝোপখালী গ্রামের জেলে মোশারেফ হোসেন বলেন, এক সময় এই নদী ছিল ইলিশে ভরপুর। এখন সারা রাত জাল ফেলেও অনেক সময় একটা ইলিশও পাওয়া যায় না।

একই গ্রামের জলিল হাওলাদার বলেন, জ্বালানি তেল, বরফ, খাবার সব মিলে দিন প্রতি ১৫০০ টাকার মতো খরচ হয়, কিন্তু আয় হচ্ছে ৫০০ টাকারও কম। আবার কোনো কোনো দিন সমান সমান থাকা যাচ্ছে।

এদিকে, বাজারে ইলিশের দাম দিন দিন চড়া হচ্ছে। বেতাগী পৌরসভার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের দাম উঠেছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ ইলিশ কিনতে পারছেন না।

বেতাগী বাজারের মাছ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন (৪৫) বলেন, `আমরা চাহিদা অনুযায়ী মাছ পাচ্ছি না। জেলেরা নদীতে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু মাছ নিয়ে ফিরছে না। ফলে বাজারে সংকট বেড়েছে। এজন্য দাম চড়া।‘

এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: তুরান বলেন, `ইলিশ চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী সব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে। ইলিশের নিষেধাজ্ঞার সময় উপজেলা প্রশাসন ও গঠিত টাস্ক ফোর্স কমিটি মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে কাজ করছে।‘