নীলফামারী প্রতিনিধি ও কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সম্পদের কোনো অভাব নেই। কিন্তু সৎ নেতৃত্ব ও সৎ নেতার অভাব। বাংলাদেশে সৎ নেতৃত্ব থাকলে দেশের আজ করুণ অবস্থা হতো না। হাজার লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হতো না। গরীব দেশ থেকে তো এতো টাকা পাচার হওয়ার কথা নয়। তাহলে এদেশ গরীব নয়। আমাদের গরীব বানিয়ে রাখা হয়েছে। যদি সৎ নেতৃত্ব ক্ষমতায় থাকত এবং এ টাকা যদি সৎভাবে দেশের কল্যাণে ব্যয় করা হতো তাহলে সিঙ্গাপুর নয় সিঙ্গাপুরের চেয়ে আরো বড় দেশ হতে পারত বাংলাদেশ। বিদেশ থেকে আমাদের দেশে চাকরি করতে মানুষ আসত। আমার দেশ থেকে যেতে হতো না। আমরা আর সেদিকে ফিরে যাব না। নব্য স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার কায়েম হোক বাংলাদেশের জনগণ এটা আর চায় না।’
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকালে নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০টি পরিবারদের মাঝে টেউটিন বিতরণপূর্ব টেপারহাট এলাকায় অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মানুষের সেবা করে আসছে। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে জামায়াতে ইসলামী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। মানুষের সেবা করে আমরা আনন্দ পাই। এটা আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আমরা শুধু মানবতার কল্যাণে, একথা শুধু স্লোগানের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রাখি না। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আল্লাহর রাসূল বলেছেন, ‘যারা মানুষের প্রতি রহম করে না, আল্লাহ তার প্রতি রহম করে না। মানুষকে ভালোবাসতে হবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘৫৪ বছরে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। জামায়াতে ইসলামী মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়। আমরা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশে কায়েম করতে চাই। শুধু আন্দোলন ও সংগ্রাম করে ইমলাম কায়েম হয় না। আমরা যদি জনগণের সমর্থন পেয়ে সরকার গঠন করতে পারি তাহলে ইনশাআল্লাহ কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করব। এদেশের মানুষকে সুখ ও শান্তি দেয়ার চেষ্টা করব। এতে শুধু মুসলিম ভাইয়েরা উপকৃত হবে না অমুসলিম ভাইয়েরাও উপকৃত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয় জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে হিন্দু ভাই-বোনদের জোর করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করাবে, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ২০২৪ সালের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল তাদের সময় প্রায়ই দুর্গাপূজায় দেখা যেত মূর্তি ভাঙা হচ্ছে, মণ্ডপে আক্রমণ করা হচ্ছে, আগুন দেয়া হচ্ছে। এর দায় জামায়াত-শিবিরের ওপর দেয়া হতো। কিন্তু আপনারা সাক্ষী, ’২৫ সালে যে দুর্গাপূজা হয়েছে, কোনো মিডিয়া বলতে পারেনি যে একটি দুর্গাপূজা মণ্ডপে আক্রমণ হয়েছে। তাহলে আগে ভাঙল কারা। যারা আগে ভেঙেছে তারা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। তারা এখন এদেশে নেই। আর জামায়াতে ইসলামী এদেশে আছে। এখন সবচেয়ে বেশি হিন্দু ভাইয়েরা আরামদায়ক অবস্থায় আছেন।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী এককভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় না। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের সরকার কায়েম করতে চাই। আমরা নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল দেখেছি, তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছে। এদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আগামী নির্বাচনে আপনাদের ভোট পেয়ে ক্ষমতায় যেয়ে আমরা যদি ইসলাম কায়েক করতে না পারি, জনগণের সেবা করতে না পারি, জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে না পারি, আপনার ভোট আপনার কাছেই থাকবে। পরের নির্বাচনে আপনারা আমাদের আর ভোট দিবেন না। এ জন্য আপনারা আমাদের একবার পরীক্ষা করে দেখেন আমরা এ কাজ করতে পানি কি না।’
আমাদের দেশে একই দিনে দু’ভোট হলে ভুল হতে পারে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট দেয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির আব্দুর রশিদ শাহের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল টিম সদস্য মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, জেলা জামায়াতের আমির ও নীলফামারী-১ আসনের সদস্য প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার ও জেলা নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আন্তাজুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের অফিস সম্পাদক আব্দুল কাদিম, প্রচার মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি প্রভাষক ছাদের হোসেন, সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের আমির ও নীলফামারী-৪ আসনের সদস্য প্রার্থী হাফেজ আব্দুল মুনতাকিম, নীলফামারী সদর উপজেলা আমির আবু হানিফা শাহ, ডিমলা উপজেলা আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান প্রমুখ।



