রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন।

আব্দুল আউয়াল, রাজশাহী ব্যুরো

Location :

Rajshahi
রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ
রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ |নয়া দিগন্ত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর-৩ (পবা-মোহনপুর) আসন। রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে স্থানীয় প্রার্থী দেয়া হলেও শুধুমাত্র রাজশাহী-৩ আসনে বহিরাগত প্রার্থী দেয়া হয়েছে। তাই এই আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শফিকুল হক মিলনের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (১০ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের আন্ধার কোটা মোড়ে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে পবা উপজেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে অংশ নেন উপজেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী।

এর আগে রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নগরীতে মশাল মিছিল বের করা হয়।

মিছিলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শফিকুল হক মিলনের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়। মিছিল থেকে বিএনপি নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থিরকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানানো হয়। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন নাসির উদ্দিন অস্থির ও রায়হানুল হক রায়হান। তবে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় শফিকুল হক মিলনকে।

বিক্ষোভ মিছিলটি আন্ধার কোটা মোড় থেকে শুরু হয়ে স্থানীয় বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এসময় ‘স্থানীয় প্রার্থী চাই’ এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে স্থানীয় প্রার্থী দেয়া হয়েছে। আর শুধুমাত্র রাজশাহী-৩ আসনে বহিরাগত প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে কেন্দ্র থেকে যেভাবে শফিকুল হক মিলনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তা তৃণমূলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

তারা বলেন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ভোটার মিলন দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির বাইরে রয়েছেন এবং দলীয় কর্মসূচি বা আন্দোলনে তার উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ফলে এলাকায় তার জনসম্পৃক্ততা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেতাকর্মীরা।’

বক্তারা আরো বলেন, রাজশাহী-৩ আসনে জেলা বিএনপির সদস্য রায়হানুল আলম রায়হান একজন ত্যাগী, অভিজ্ঞ নেতা। দুঃসময়ে মাঠে ছিলেন এবং তৃণমূলের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করেছেন। অথচ তাকে উপেক্ষা করে এমন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি দীর্ঘদিন রাজনীতির বাইরে ছিলেন। এতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সমাবেশে বক্তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মিলনের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান। একই সাথে স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে রাজশাহী-৩ আসনে মনোনয়ন দেয়ার আহ্বান জানান তারা।

হুজরীপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজশাহী-৩ আসনে স্থানীয় প্রার্থী দেয়া হয়নি। কিন্তু অন্য আসনগুলোতে স্থানীয় প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দল যখন কঠিন সময় পার করেছে, তখন যারা রাজপথে ছিলেন না, তাদের হঠাৎ করে প্রার্থী করা হলে তৃণমূলের মনোবল ভেঙে যাবে। এক্ষেত্রে আন্দোলন ও সংগ্রামের সময় যারা পাশে ছিলেন, তাদেরই প্রাধান্য দেয়া উচিত।’

হড়গ্ৰাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ বলেন, ‘আমরা গুলির ভয় না পেয়ে, মামলা-হামলার ভয় না পেয়ে রাজপথে ছিলাম। এখন সেই ত্যাগের কোনো মূল্য নেই! বাইরে থাকা লোকেরা প্রার্থী হবে, আর আমরা কেবল হাততালি দেবো—এটা মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা স্থানীয় প্রার্থী চাই, দিতে হবে।’

হুজরীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের রক্ত, ঘাম, অশ্রু মিশে আছে এই মাটিতে। সেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে বাইরের কাউকে মনোনয়ন দেয়া মানে আমাদের আত্মত্যাগের প্রতি অবজ্ঞা।’