কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে চরবাসীর স্বপ্ন। তাদের প্রশ্ন এখন ‘আর কতবার গৃহহীন হবো‘। ফুলবাড়ী উপজেলার চর গোলক মন্ডল এলাকার মানুষের হৃদয়ে নদী ভাঙার আর্তনাদ। প্রতি বছর ধরলা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে এলাকাবাসী।
আজবর আলী। এই গ্রামেরই এক প্রবীণ বাসিন্দা। গত বছর ধরলার ভাঙনে তার বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়। এরপর কষ্ট করে নতুন ঘর তুলেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সেই নতুন ঘরটিও গত বৃহস্পতিবার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে শ্যালকের বাড়ির এক কোণায় কোনোমতে একটি কুড়েঘর তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।
আজবর আলীর মতো এমন দুর্দশার চিত্র চর গোলক মন্ডল এলাকায় এখন শত শত পরিবারের। চোখেমুখে যেন হতাশা। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে কোথায় আশ্রয় নিবে তারা। বর্ষা মৌসুম এলেই নদীতে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। কারো কোনো নজর নেই নদী পাড়ের অসহায় মানুষদের প্রতি।
স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদুল হক বলেন, ‘গত দু’তিন বছরে ধরলার পাড়ে প্রায় ৪০০ পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে মানচিত্র থেকে গ্রামটা মুছে যাবে। আমরা বারবার বলছি, একটা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই। আশ্বাস দিলেও কাজ হয় না।’
নদী ভাঙনের ভয়াবহতা ঠেকাতে সম্প্রতি এলাকাবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। তারা বলছেন, প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত হতে হতে এখন তারা অসহায়।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হাছেন আলী জানান, ‘গত বর্ষায় ধরলার ভয়াবহ ভাঙনে চর গোলক মন্ডল এলাকার প্রায় ৩০টি পরিবার ও অর্ধ কিলোমিটার সড়ক নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। শত শত একর ফসলি জমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার জিওব্যাগ ফেলেছিলেন, কিন্তু ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমানে ওই এলাকায় স্কুল, মসজিদ মাদরাসাসহ অন্তত ৫০০ পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে। বর্ষার আগেই ধরলার ভাঙন রোধে কার্যকর ও স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর বরাদ্দ ও আশ্বাসের কথা শোনা গেলেও বাস্তব কার্যকর কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে নদী ভাঙনের হুমকিতে প্রতি বর্ষায় হাজারো পরিবারকে দিশেহারা হতে হচ্ছে।
এলাকাবাসীর দাবি, যত দ্রুততম সময়ে সম্ভব নদী ভাঙনরোধে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। যাতে করে বছরের পর বছর গৃহহীন হওয়ার দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে চরাঞ্চলের মানুষের মুক্তি মেলে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, ‘চর গোলক মন্ডল এলাকায় গত বছর ধরলার ভাঙন রোধে সাত হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে নতুন বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’