অবশেষে পদ্মা সেতুতে চালু হতে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন বা ইটিসি পদ্ধতি। দেশের সেতু অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতুতে বিরতিহীন, দ্রুত ও ঝামেলামুক্ত সেতু পারপার নিশ্চিত করতে আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই চালু হতে পারে এ পদ্ধতি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল রোববার এর চূড়ান্ত টেস্ট সফল হলেই সেতুতে শুরু হতে পারে এ পদ্ধতি। ফলে এটি দেশের টোল ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়া দিগন্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্তৃক গাড়ির উইন্ডশিল্ডে সংযুক্ত স্টিকার (ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির জন্য ব্যবহৃত) একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) ট্যাগ ব্যবহার করা যানবাহনগুলো থেকেই সেতুতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইটিসি পদ্ধতিতে টোল আদায় করা হবে। সেতুর টোল প্লাজার গেটে বসানো বিশেষ ক্যামেরা ও আরএফআইডি ট্যাগ রিডার গাড়ির নম্বর শনাক্ত করে টোল কেটে নেবে এবং সাথে সাথে ব্যারিয়ার খুলে দেবে। এ প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন ৩০ কিলোমিটার বেগে আসাও নন স্টপ যানবাহনগুলো থেকে দ্রুত টোল আদায় হয়ে যাবে বলে জানা গেছে।
এ পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে হলে একেকটি গাড়ির ট্যাগ এবং এ পদ্ধতির আওতায় আসা নিজ নিজ ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা থাকতে হবে। এ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি চালুর ফলে ম্যানুয়াল টোল আদায়ের কারণে সৃষ্ট যানজট ও সময় নষ্টের ভোগান্তি দূর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে ইটিসি পদ্ধতিতে দুই প্রান্তে অতিরিক্ত ২টি বুথ থাকলেও সফটওয়্যার সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের কিছু কাজ ও ইলেকট্রনিক মানি ট্রানজেকশনের জন্য পেমেন্ট মেথড সিস্টেমের আওতায় না আসতে পারায় এতো দিন এর সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এদিকে নতুন করে সেতু কর্তৃপক্ষ ইউনিভার্সাল প্রসেসে বা সর্বজনীন ব্যবস্থার সুবিধা রেখে যে কোনো অ্যাপের মাধ্যমে ইটিসি পদ্ধতিতে ডিজিটাল পে সিস্টেম চালুর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম অ্যাপের সহযোগিতায় ইটিসি ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে অ্যাপের সাথে যুক্ত হওয়া মোবাইলফোন ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ, রকেট, নগদ, উপায়সহ বা অন্য যে কোনো ব্যাংকের ডিজিটাল মানি ট্রানজেকশন ব্যবহার করে যানবাহনের চালকরা সেতুর টোল দিতে পারবেন। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে এ বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর আগে গত ৩০ এপ্রিল রাজধানীর সেতু ভবনে সেতু বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ তিনটি ব্যাংক ও মোবাইলফোন ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, ‘সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান মহাসড়কে টোল আদায়ে স্বস্তি, সময় সাশ্রয় ও সেবা সহজীকরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আলোকে এ ইটিসি সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি শুধু পদ্মা সেতু নয়, যমুনা সেতু, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্য সেতুতেও আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর টোল আদায়ের পথে এক বড় মাইলফলক।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৫ জুলাই পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলকভাবে ইটিসি সিস্টেম শুরু হয়েছিল। এদিন পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা দুই প্রান্তে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) পদ্ধতিতে একটি করে বুথে এ পরীক্ষামূলক টোল আদায় শুরু করা হয়। তবে এটি ছিল পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া। পাইলটিংয়ের ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই সিস্টেমটি চালুর ঘোষণা ছিল। পাইলটিং বা পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ার প্রায় দুই বছর দুই মাস পরেও পদ্মা সেতুতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শুরু হচ্ছিল না ইটিসি। এ সময় কর্তৃপক্ষের কিছু সিদ্ধান্ত বাকি থাকার কারণে এবং পাইলটিং অপারেশনে লেন কন্সট্রাকশনের কিছু কাজ, ইলেকট্রনিক মানি ট্রানজেকশনের জন্য পেমেন্ট মেথড সিস্টেম, কোরিয়ান এক্সপার্টের মাধ্যমে সফটওয়্যারের চূড়ান্ত পরীক্ষার কিছু কাজ বাকি ছিল। এ কারণেই চূড়ান্ত অপারেশনে যেতে বিলম্ব হয় বলে জানা গেছে।
পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়াদ নিলয় নয়া দিগন্তকে জানান, ‘এ পদ্ধতিতে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় সর্বনিম্ন ৩০ কিলোমিটার বেগে আসা চলন্ত যান থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায় করা যাবে। বিআরটিএর রেজিস্ট্রেশন করা ট্যাগ লাগানো যেকোনো যানবাহনের সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে অটোমেটিক নির্ধারিত টোল আদায় হয়ে যাবে। টোল আদায় হয়ে গেলে গাড়ির সামনে থেকে ব্যারিয়ার সরে যাবে এবং বিরতিহীনভাবে সেতু পারপার হতে পারবে। এতে ক্যাশ লেনদেন ও টোল প্লাজায় থামাতে হবে না কোনো গাড়িকে। আগামীকাল রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এর চূড়ান্ত টেস্ট সফল হলেই পরদিন থেকে এ পদ্ধতি উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’