রংপুরে হাসাপাতালে রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে উত্তেজনা, আহত ৩

স্বজনদের দাবি ভুল চিকিৎসা, কর্তৃপক্ষের অস্বীকার

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাত থেকে শুরু হয়ে এই উত্তেজনা আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছিল।

সরকার মাজহারুল মান্নান, রংপুর ব্যুরো

Location :

Rangpur
রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনা
রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উত্তেজনা |নয়া দিগন্ত

রংপুর কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হার্টের রিং পরানোর সময় এক রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে স্বজনদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাত থেকে শুরু হয়ে এই উত্তেজনা আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছিল।

পুলিশ জানায়, বুধবার (৫ নভেম্বর) মধ্যরাতে বুকে ব্যাথা নিয়ে নীলফামারীর ডোমার উপজেলার মোকছেদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি হন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রোগীর হার্টে রিং পরানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলে রোগীর ছেলের স্বাক্ষর নিয়ে অপারেশন করার সময় মোকছেদুল ইসলাম মারা যান। এতে স্বজনরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে স্বজনদের সাথে কর্তৃপক্ষের ঝামেলা হয়।

স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের লোকজন প্রথমে হামলা চালায়। এতে রোগীর ছেলে শাফিউল ইসলাম, শ্যালক হুমায়ুন কবির ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিয়ন আহত হন। এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে গিয়ে ঘটনার বিচার দাবি করেন। পুলিশ এসে গভীর রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রোগীর ছেলে শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘ভুল চিকিৎসা ও কালক্ষেপণের কারণেই বাবার মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টির ব্যাখ্যা চাইতে গেলে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। হাসপাতালের লোকজন রড দিয়ে আঘাত করে। মব তৈরির মাধ্যমে আমাদেরকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করে হাসপাতালের নিযুক্ত সন্ত্রাসীরা।’

তবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার ব্যাখ্যা দেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: আসমাউল রিজাল। তিনি দাবি করেন, ‘৬ নভেম্বর বিকেল থেকে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়, যেহেতু রেডিওগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যায়বহুল ও জটিল। পরীক্ষা চলমান অবস্থায় তার কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। এ অবস্থায় তাকে ওইদিন ৪টা ৪৫ মিনিটে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং নিয়মানুয়ায়ী তার ছেলের কাছে সম্মতি স্বাক্ষর নেয়া হয়। এই ক্যাথল্যাবে অনেক সফলতা আছে কিন্তু এই রোগীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। এটা মেডিক্যাল হ্যাজার্ড। চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করা হয়নি।’

তিনি আরো জানান, ‘রোগীর মৃত্যুর পর আইসিইউতে রোগীদের জানানো হলে তাদের আচরণ পরিবর্তন হয়। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ একজন সেখান থেকে লাইভে চলে যান এবং অভিযোগ আনেন এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। এ নিয়ে সেখানে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরি হয়। আমরা বারবার স্বজনদের বোঝানোর চেষ্টা করি। আইসিইউতে যেহেতু অনেক ক্রিটিক্যাল প্যাসেন্ট থাকে সেকারণে আমরা তাদেরকে বারবার বলি করিডোরে গিয়ে আমরা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। কিন্তু আমরা তাদের সহযোগিতা দিতে চাইলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেননি।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক মিরাজুল মহসিন বলেন, ‘মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। সমস্ত ডকুমেন্ট আছে হাসপাতালে। এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা: শাহীন সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’