জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি প্রদান এবং সেই সনদের ভিত্তিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি না দিলে তা ‘কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ বলে বিবেচিত হবে। ফলে এ সনদ শুধু কথামালার ফুলঝুড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাস্তবে এর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। ফলে অন্তর্বর্তী সরকার এবং তাদের পুরো কার্যক্রম অবৈধ ও অসাংবিধানিক হয়ে পড়বে। বেআইনি হয়ে পড়বে জুলাই বিপ্লবও। ফলে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দেয়ার নতুন করে সুযোগ সৃষ্টি হবে। জুলাই সনদকে সাংবিধানিক ভিত্তি দিয়ে তা অবিলম্বে কার্যকর করার আহ্বান জানাই।’
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাড্ডা থানা জামায়াত আয়োজিত জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত ও ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যা এবং দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমানসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে আয়োজিত এক গণসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ও জাতির সামনে নতুন সম্ভবনা দেখা দিলেও মহল বিশেষের ক্ষমতালিপ্সা ও অহমিকার কারণে সেই সম্ভবনার অপমৃত্যুর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাদের আস্কারা পেয়েই দেশ এখন চাঁদাবাজ ও অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তারা এখন পতিত স্বৈরাচারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তাদের ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছেন। তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে জিহ্বা কাটাসহ নানাবিধ হুমকি-ধমকি দিয়ে দেশে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এতে প্রমাণ হয় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করতে পারেনি বরং নির্বাচনী ব্যবস্থা সেই অশুভ বৃত্তিতেই রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘পতিত স্বৈরাচার দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংসসহ রাষ্ট্রীয় সকল অবকাঠামোকে ধ্বংস করেছে। তাই দেশে সুশাসন ও নাগরিকদের সকল অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর কার্যকর সংস্কার করতে হবে। শুধু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করলেই চলবে না বরং জাতীয় পার্টিসহ স্বৈরাচারের সকল দোসরদের রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। আর সকল নাগরিকের ভোটের মূল্যায়ন ও গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে হলে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন হতে হবে। একইসাথে জুলাই গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার না হলে এ দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।‘
এছাড়া দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিতে জামায়াত ৫ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু করেছে। মূলত এসব দাবি এখন রীতিমত গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। তাই গণদাবি মেনে আগামী ফেব্রুয়ারিতে দেশে ত্রয়োদশ সংসদের অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান জামায়াতের এ নেতা।
বাড্ডা উত্তর থানা জামায়াতের আমির মাওলানা কুতুব উদ্দীনের সভাপতিত্ব ও বাড্ডা পশ্চিম থানা আমির আব্দুস সবুর ফরহাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশরনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১১ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ। এ সময় ঢাকা-১১ সংসদীয় আসনের থানা আমির ও সেক্রেটারিরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশ শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়।- বিজ্ঞপ্তি