গাইবান্ধার সাঘাটায় ধসে গেল বালু দিয়ে তৈরি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে মাটির বদলে বালু দিয়ে সংস্কার করার অভিযোগ উঠেছে। হালকা বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে ধসে গেছে বালু মাটি। বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁধের ওপর পথচারী ও যান চলাচল করছে।
সরজমিনে দেখা যায়, বাঁশহাটা, মুন্সিরহাট, ইটাকুড়ি, কাঁটাদ্বার, খেয়াহাট, ডাকবালা, জমারবাড়ি এলাকায় বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করায় ফলে শতশত জায়গায় ফাটল ও ধস দেখা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সাঘাটা যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণে বাঁশহাটা উকুনপাগলীর মোড় থেকে জুমারবাড়ী বসন্তপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার বাঁধের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। নদী তীর সংরক্ষণ প্রকল্প-১ এই কাজটি শুরু হয় ২০২৩ সালের শুরু দিকে। তিন প্যাকেজে যৌথভাবে বাঁধ তৈরির কাজ শুরু করেন রংপুরের ঠিকাদার হাসিবুল হাসান এবং এমএস রহমান।
ওই এলাকার বাসিন্দা জুয়েল রানা জানায়, ‘আশপাশের বিভিন্ন লোক জনের কাছে থেকে কম দামে বালু মাটি নিয়ে বাঁধের কাজ শুরু করে। বাগান, মাঠ, নদীর পাড় থেকে ছোট-বড় গর্তে দেখা গেছে। যেখান থেকে বাঁধের জন্য মাটি নেয়া হয়েছে। এক্সকেভেটর (ভেকু) দিয়ে নদ-নদীর তীরবর্তী স্থান থেকে মাটি-বালু তোলা হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ। বর্ষার ভরা মৌসুম শুরুর আগেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনরায় মেরামতের দাবি জানায় তিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাদের যোগসাজশে মাটির পরিবর্তে বালু মাটি দিয়ে তড়িঘড়ি করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্নাসাত করছেন। এতে বাঁধের টেকসই নিয়ে নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
আটোচালক দিলবার রহমান বলেন, ‘ভেকু মেশিন দিয়ে বাঁধের নীচ থেকেই বালু মাটি দিয়ে এই বাঁধটি কাজ করা হয়েছে। যার কারণে কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টিতে কচুয়া থেকে জুমারবাড়ী পর্যন্ত বাঁধের শতশত জায়গায় ধস দেখা গেছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা মেহের আলী বলেন, ‘কাজ করার সময় পানি উন্নয়নের কর্তারা উপস্থিত ছিল। তাদের আমরা কাজের অনিয়ম নিয়ে কথা বললেও তারা শুনে নাই। উলটা আমাদের কাজের স্টিমেট সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই বলেন। বালু মাটি দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করার কারণে বৃষ্টির সময় গর্ত ও ধসে গেছে। বালুগুলো ফুটে উঠার কারণে মানুষ ও যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে।’
কায়সার সরকার বলেন, ঠিকাদারের সাথে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিশ্চয়ই যোগসাজশ রয়েছে। তাছাড়া কাজের এমন অনিয়ম করার তারা সাহস পায় কীভাবে? এই দুর্নীতিবাজ কর্তাদের কারণে বাঁধের অনিয়ম হয়েছে। এতে বর্ষা ও বন্যায় বাঁধের আশপাশের মানুষসহ ফলসি জমির ব্যাপক ক্ষতি হবে।
ইটাকুড়ির গ্রামের বাসিন্দা ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের টাকায় এমন কাজ করে লাভ কী? বালু মাটির বাঁধটি কিছুদিন পরই তো ধসে যাচ্ছে। বন্যায় এই বাঁধ কতক্ষণ টিকে থাকবে।’
এ বিষয়ে ঠিকাদার হাসিবুল হাসানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: হাফিজুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমিও শুনেছি, বাঁধটিতে বৃষ্টির কারণে বেশ কয়েক জায়গায় সামান্য ধসে গেছে। তবে বাঁধের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। তবে বাঁধের কাজের ঠিকাদারের ইচ্ছাকৃত অনিয়ম পেলে তার কাজের বিল আটকে রাখা হবে।’