কিশোরগঞ্জে মাদক কারবারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে জাতীয়তাবাদী যুবদলের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে ইমরানুল হক হিমেল (৩৫) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সদর উপজেলার বৌলাই এলাকায় থেমে থেমে এ সংঘর্ষ ও নৈরাজ্যের ঘটনা ঘটে।
নিহত ইমরানুল হক হিমেল বৌলাই এলাকার মূলসতাল গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তাকে নির্মমভাবে কোপানো হয়।
সংঘর্ষের সময় শর্ট গানের গুলিতে রাজিবসহ দুইজন গুরুতর আহত হয়। সবমিলিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়েছে উভয়পক্ষের অন্তত ২০জন। এ সংঘর্ষের জের ধরে অন্তত পাঁচটি বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। লুটপাট ও ভাঙচুর হয়েছে আরো বেশ কিছু বাড়িঘর।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, যুবদলের স্থানীয় দুই নেতার এলাকায় আধিপত্য ও মাদক কারবারির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এ ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বহুদিন ধরে তাদের মধ্যে মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলছিল। গতকাল তা ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নেয়।
গুলিতে আহত দুইজনকে স্থানীয়রা কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফারড করে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বৌলাই চরপাড়ার বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন এবং কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক নতুন বৌলাই এলাকার বাসিন্দা ইকরামুল হক এমদাদের মধ্যে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দীর্ঘ ধরে বিরোধ চলছিল। এসব নিয়ে তার সমর্থকরা বৃহস্পতিবার বাদ বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতিতে লিপ্ত হয়। এর জের ধরে শুক্রবার দুপুরে উভয়পক্ষের মধ্যে আধাঘণ্টা ব্যাপী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে সাজ্জাদ গ্রুপের ইমরানুল হক হিমেল এবং এমদাদ গ্রুপের রাজিব গুরুতর আহত হয়। আহত দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ইমরানুল হক হিমেল মারা যায়। তার মৃত্যুসংবাদ এলাকায় পৌঁছলে সাজ্জাদের লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিকেল ৪টার দিকে সরেজমিন গিয়ে বেশ কয়েকটি বাড়ি তখনও জ্বলতে দেখা যায়, এর মধ্যে ইকরামুল হক এমদাদ, আবুল হোসেন ও ইয়াসিনের বাড়ি অন্যতম। লোকজন তখনও পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিলেন।
স্থানীরা জানায়, হিমেলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ সাজ্জাদ হোসেনের লোকজন ওইসব বাড়িঘরে তান্ডব চালায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ খবর পেয়ে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে গেলেও হামলাকারীরা তাদের আগুন নেভাতে দেয়নি। ফলে বাড়িগুলো একেবারে ভস্মিভুত হয়ে যায়।
ঘটনার পর সন্ধ্যার দিকেও এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনা সদস্য এলাকায় টহল দিচ্ছিল। এলাকায় দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, বৌলাই এলাকাটি মাদকপ্রবণ এলাকা। যুবদলের দুটি অংশ এসব মাদক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু এসব নয় চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতার সাথেও জড়িত। এসব নিয়েই তারা মাঝে মাঝে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়। গতকালও একই কারণে সংঘর্ষ হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। পুরো বিষয়টি দল তদন্ত করবে। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আর আইনগত বিষয়গুলো দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সংর্ঘষের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আর এসব নৈরাজ্যে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, ‘মূলত আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে এ সংষর্ষ হয়। এ ব্যাপারে থানায় এখনো মামলা হয়নি।’