বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়কের নির্দেশ উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা ও সম্মেলন প্রস্তুতি সভার আয়োজনের প্রতিবাদে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির একাংশ সংবাদ সম্মেলন করেছে।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে বাজিতপুর উপজেলা সদরে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে অভিযোগ করা হয় ২০২০ সালের ১০ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালকে আহ্বায়ক করে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির গঠন করা হয়। যার মেয়াদ ছিল তিন মাস। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।
গত ৫ জুলাই মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি একতরফাভাবে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল আহ্বান করেছিল। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং বেশ কয়েকটি দাবির স্বপক্ষে গত ২ জুলাই বাজিতপুর বাঁশমহলে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল উপজেলা বিএনপির বড় একটি অংশ। এর প্রেক্ষিতে ঘোষিত কাউন্সিল স্থগিত ঘোষণা করে জেলা বিএনপি। প্রতিবাদকারী অংশের সাথে সমন্বয়ের লক্ষে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও জেলা নেতৃবৃন্দ কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হন। বৃহত্তর দলীয় ঐক্যের স্বার্থে তারা সকল ইউনিয়নের ‘বিতর্কিত’ কমিটি বাতিল করে উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি ও তাদের সাথে সমন্বয় করে নতুন ইউনিয়ন কমিটি গঠন ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ের মাধ্যমে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিষয়টির মূল সমন্বয়ের দায়িত্বে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। অথচ তার নির্দেশ উপেক্ষা করে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি গঠনের লক্ষে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে।
শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব অভিযোগ করেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: কাজল ভূঁইয়া। তার সাথে এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির অর্ধশত নেতা।
এ সময় তারা বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি হতে ময়মনসিংহ বিভাগের সকল কাউন্সিল সম্পন্ন করার জন্য সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন কেন্দ্রীয় বিএনপি মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল।
তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন সবার সাথে সমন্বয় করে নতুন করে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করার জন্য। তারপর উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে। অথচ তার নির্দেশনা উপেক্ষা করে জেলা কমিটি উপজেলা কমিটির গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়।
মো: কাজল ভূঁইয়া দাবি করেন, ২০২০ সালে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে গঠিত ইউনিয়ন কমিটিগুলো বিতর্কিত। এ কারণেই ইউনিয়ন পর্যায়ের বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে সম্মেলনের মাধ্যমে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন করে কমিটি গঠন করে ইউনিয়নের ভোটারের মাধ্যমে উপজেলা কমিটি গঠন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্য নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলা বিএনপির দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাগণ উভয় পক্ষের তালিকা হতে নাম নিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ ৭১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন ইউনিয়ন কমিটির প্রণয়ন করার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় বিএনপি নির্দেশ উপেক্ষা করে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ তাদেরকে নতুন ইউনিয়ন কমিটির অনুলিপি প্রদান না করে এবং তাদের সাথে আলোচনা ছাড়াই আবারো আগামী ২০ আগস্ট উপজেলা সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন।
এ সময় তারা আরো অভিযোগ করেন, মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান আহবায়ক কমিটি তাদের সাথে আলোচনা ও অবগত না করে গত ১০ আগস্ট একটি সম্মেলন প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন করেন।
এ সময় বক্তারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলা ও বর্তমান উপজেলা আহবায়ক কমিটি কাউন্সিলের নামে প্রহসন ও একতরফা নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছেন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক এবং জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের প্রতি তারা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দলের ঐক্য ও শান্তির লক্ষ্যে বাজিতপুর বিএনপির বিবাদমান সকল পক্ষকে সমন্বয় করে একটি উৎসবমুখর কাউন্সিল আয়োজন করা হোক।
গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা, দলের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্টের জন্য ঘোষিত একতরফা কাউন্সিল বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন তারা।
এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান জেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য জিএস মীর জলিল, জেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মো: কাইয়ুম খান হেলাল, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও যুবদলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি, উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো: শাহ আলম।