উপকূলীয় অঞ্চলে বিলুপ্তির পথে দেশীয় ধানের শতাধিক জাত

ব্রি৭১, ব্রি৭৫, ব্রি৭৬, ব্রি২৮, ব্রি২৯ এবং নতুন ব্রি৯৬ জাতের ধান কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়। ব্রি৯৬ জাতের চাল খাটো, সোনালি রঙের এবং ফলনও বেশি। তবে এসব জাতের চাষে জমির উর্বরতা কমে যায়, পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা

Location :

Patuakhali
বিলুপ্তির পথে দেশীয় ধানের শতাধিক জাত
বিলুপ্তির পথে দেশীয় ধানের শতাধিক জাত |নয়া দিগন্ত

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বিলুপ্তির পথে দেশের ঐতিহ্যবাহী দেশীয় ধানের শতাধিক জাত। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রভাবে সাদা মোটা, কালাকোরা, কালি জিরা, কাজল সাইল, সর্ন মুসুরি, জামাইভোগ, রাজা, বিন্নি, শালি, লালচল্লিশসহ বহু দেশীয় ধানের নাম আজ প্রায় বিস্মৃত। এসব ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকরা, ফলে হারিয়ে যাচ্ছে প্রজন্মের ঐতিহ্য।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯১১ সালে দেশে ১৮ হাজার জাতের ধানের রেকর্ড ছিল। ১৯৮৪ সালের জরিপে পাওয়া যায় ১২ হাজার ৪৮৭ জাতের হিসাব। সর্বশেষ ২০১১ সালের জরিপ বলছে, বর্তমানে দেশে রয়েছে আট হাজার জাত। তবে বাস্তবে চাষ হচ্ছে মাত্র কয়েকটি জাত।

কৃষকরা বলছেন, দেশীয় ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় হাইব্রিড ও উফশী জাতের দিকে ঝুঁকছেন তারা।

সরকারি কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে হাইব্রিড ও উফশী জাতের ধান চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এসব ধান কম সময়ে বেশি ফলন দেয়, খরা, বন্যা, লবণাক্ততা, তাপ, রোগবালাই ও পোকামাকড় সহনশীল। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনে সচেষ্ট।

কৃষি বিভাগ জানায়, ব্রি৭১, ব্রি৭৫, ব্রি৭৬, ব্রি২৮, ব্রি২৯ এবং নতুন ব্রি৯৬ জাতের ধান কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়। ব্রি৯৬ জাতের চাল খাটো, সোনালি রঙের এবং ফলনও বেশি। তবে এসব জাতের চাষে জমির উর্বরতা কমে যায়, পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

দেশীয় ধানের বড় সুবিধা হলো-এতে কীটনাশক, সার বা বিষের প্রয়োজন হয় না। এটি পরিবেশ ও প্রাণিকুলের জন্য নিরাপদ। অথচ উচ্চ ফলনের আশায় কৃষকরা আটকে গেছেন মাত্র আট-দশটি জাতের মধ্যে। এর ফলে জলজ প্রাণি, মাছ ও বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বাড়ছে রোগবালাই।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় ধান সংরক্ষণে সরকারের উচিত পেটেন্ট তৈরি করে জাতগুলোকে রক্ষা করা। কারণ একটি ধানের জাত হারিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে হারিয়ে যায় একটি এলাকার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। তাই দেশীয় ধান রক্ষায় জোরালো সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ জরুরি।