কুড়িগ্রামে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা

জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে।

রেজাউল করিম রেজা, কু‌ড়িগ্রাম

Location :

Kurigram
হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত কিশোরীর বাবা, মা ও চাচিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ
হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত কিশোরীর বাবা, মা ও চাচিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ |নয়া দিগন্ত

কুড়িগ্রামে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজের কিশোরী কন্যাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছেন এক পাষণ্ড বাবা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ নিহত কিশোরীর বাবা, মা ও চাচিকে গ্রেফতার করেছে।

সোমবার (১২ মার্চ) রাতে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

জানা যায়, গত শনিবার (১০ মে) সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কাগজিপাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির পাশের একটি ভুট্টা ক্ষে‌তে পাওয়া যায় নবম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতি খাতুনের (১৫) রক্তাক্ত লাশ। তার মাথা ও শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।

প্রথমে নিহতের পরিবার দাবি করে, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ তাকে অপহরণ করে হত্যা করেছে। নিহতের চাচা খলিল হক অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে স্থানীয়দের সন্দেহ ও পুলিশের গোয়েন্দা নজরদারির ভিত্তিতে ঘটনার মোড় দ্রুতই পাল্টে যায়। তদন্তে উঠে আসে, প্রতিবেশী মজিবর রহমানের সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলা জমি বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়েই জান্নাতিকে হত্যা করেন তার বাবা জাহিদুল ইসলাম, মা মোর্শেদা বেগম ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী শাহিনুর বেগম।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, গভীর রাতে রড ও দা দিয়ে জান্নাতির মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এরপর তার নিথর দেহ ভুট্টাক্ষেতের পাশে ফেলে দেয়া হয়। আলামত নষ্ট করতে খড়ের গাদায় ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন।

হত্যার মাত্র চার ঘণ্টার মাথায় জেলা পুলিশ ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে এবং তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, মামলার বাদী খলিল হকও এ ষড়যন্ত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খলিল, জাহিদুল ও তাদের সহযোগীরা আগেও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নানা অপকর্মে জড়িত ছিলেন- যেমন গরু-ছাগল চুরি, খড়ের গাদায় আগুন দেয়া, এমনকি নিজের ছোট ভাই রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হালিমার ওপর একাধিকবার হামলা চালানো। ঘটনার পর থেকেই খলিল হক পলাতক রয়েছেন এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: হাবিবুল্লাহ এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অফিসার বজলার রহমান জানান, ’এটি একটি অত্যন্ত নির্মম ও পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমরা দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করতে পেরেছি।’